স্টকহেল্মে, রিও বা জোহানবার্গের ‘সাসটেনবল ডেভেলপমেণ্ট’ সম্মেলনের সিদ্ধান্ত কোথাও জোর দিয়ে বলা যাচ্ছে না যে পৃথিবীর মুষ্টিমেয় 20-25 শতাংশ ধনী মানুষের চূড়ান্ত ভোগবাদী জীবনই আজ পৃথিবীকে ধ্বংসের কিনারায় এনে ফেলেছে। শিল্প বিপ্লবের মধ্যভাগে 1800 সালে যখন একজন আমেরিকান বাজারে যেত তখন সে 300 রকমের জিনিস কেনাকাটি করতে পারত। বাজারের জায়গা ছিল প্রায় 1500 বঃ ফুট। আজ, এক লক্ষ লোক বাস করে এমন এক শহরে যখন এক জন আমেরিকান বাজার করতে যায় সে 10 লক্ষ রকমের জিনিস কিনবার সুযোগ পায়। কেনাকাটি করার বাজারের জায়গা পায় 1 কোটি 50 লক্ষ বর্গফুট। 1000 জন আমেরিকানদের মধ্যে 482.4 জনের গাড়ি আছে (2001 সালে) সেখানে ভারতীয়ের আছে 5.9 জনের (2000) আর চিনের 10 জনের (2003) একজন আমেরিকান বছরে 312.08 কেজি কাগজ ব্যবহার করে (2004 সালে)। ভারত করে 4.43 কেজি এবং চিন 33.6 কেজি।
বিলুপ্তির পদধ্বনিই আমরা শুনি যখন আমরা দেখি আমেরিকা এবং অন্যান্য পশ্চিমী দেশ হাজার হাজার মাইল দূরের দেশে লক্ষ লক্ষ মানুষ মারছে তেলের জন্য। সমাজ ও প্রকৃতির এই যে ভেঙে পড়া এর প্রধান কারণ পৃথিবীর ধনী মানুষের, প্রথম ও তৃতীয় বিশ্বের, চরম ভোগবাদী জীবন। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর দ্বিতীয় বিশ্ব অপসৃয়মান। চিনে আজ নয় জন বিলিয়েনিয়ার। একমাত্র আশার আলো কিউবা। স্টকহেল্মে, রিও বা জোহানবার্গের ‘সাসটেনবল ডেভেলপমেণ্ট’ সম্মেলনের সিদ্ধান্ত কোথাও জোর দিয়ে বলা যাচ্ছে না যে পৃথিবীর মুষ্টিমেয় 20-25 শতাংশ ধনী মানুষের চূড়ান্ত ভোগবাদী জীবনই আজ পৃথিবীকে ধ্বংসের কিনারায় এনে ফেলেছে। শিল্প বিপ্লবের মধ্যভাগে 1800 সালে যখন একজন আমেরিকান বাজারে যেত তখন সে 300 রকমের জিনিস কেনাকাটি করতে পারত। বাজারের জায়গা ছিল প্রায় 1500 বঃ ফুট। আজ, এক লক্ষ লোক বাস করে এমন এক শহরে যখন এক জন আমেরিকান বাজার করতে যায় সে 10 লক্ষ রকমের জিনিস কিনবার সুযোগ পায়। কেনাকাটি করার বাজারের জায়গা পায় 1 কোটি 50 লক্ষ বর্গফুট। 1000 জন আমেরিকানদের মধ্যে 482.4 জনের গাড়ি আছে (2001 সালে) সেখানে ভারতীয়ের আছে 5.9 জনের (2000) আর চিনের 10 জনের (2003) একজন আমেরিকান বছরে 312.08 কেজি কাগজ ব্যবহার করে (2004 সালে)। ভারত করে 4.43 কেজি এবং চিন 33.6 কেজি। আজ যদি ভারত ও চিনের প্রায় 215 কোটি মানুষ আমেরিকার মত প্রকৃতির সম্পদ ভোগ করে তাহলে পৃথিবী দশ বছরে পঙ্গপাল পড়ার মত নিঃস্ব হয়ে যাবে। যা গান্ধী বুঝেছিলেন।তাই স্বাধীনতা প্রাপ্তির দু -বছর আগে 1945 সালের 5 -ই অক্টোবর গান্ধী নেহরুকে এক চিঠিতে তাঁর নিজের স্বপ্নের ভারতবর্ষের কথা লেখেন। ‘’I am convinced that if India is to attain true freedom and through India the whole world (!) then sooner or later the fact must be recognized that people will have to live in villages, not in towns, in huts, not in palaces. Crores of people will not be able to live in peace with each other in towns and palaces. Then they will have no recourse but to resort to both violence and untruth.’’ এই যে গ্রাম সমাজের কথা তিনি বলছেন সেই গ্রাম কেমন হবে? তিনি বলছেন, ‘’while I admire modern science which should be reclothed and refastioned aright. You must not imagine I am envisioning our village life as it is today…..My ideal village will contain intelligent human beings. They will not live in dirt and darkness as animals. They will not live in dirt and darkness as animals. Men and women will be free and able to hold on their own against any one in the world.’’….it is possible to envisage railways, post and telegraph offices etc.’’ রবীন্দ্রনাথও একশ বছরেও আগে শান্তিনিকেতন, শ্রীনিকেতন গড়ছেন এবং ‘village reconstruction’ –এর কথা বলছেন।
তাই, দেখতে পাচ্ছি স্বাধীনতা প্রাপ্তির আগে দু - রকম উন্নয়নের মডেল ভারতবর্ষের মানুষের সামনে উপস্থাপিত হয়েছিল। একটা ছিল রবীন্দ্রনাথ - গান্ধীর মডেল। আর অন্যটি ছিল নেহরু, সুভাষ এবং বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের মত কমিউনিস্টদের পশ্চিমী উন্নয়নের মডেল। গান্ধীর মডেল প্রত্যাখ্যান করে ওঁর চিঠি লেখার 4 দিন পরে 9 -ই অক্টোবর জওহরলাল নেহরু লিখলেন, ‘‘I have a feeling that most of these question are thought of and discussed in terms of long ago ignoring the vast changes that have taken place all over the world during the last generations or more. It is 38 years since ‘Hind Swaraj’ was written. The world has completely changed since then possibly in a wrong direction.’’ তারপর জওহরলাল চিঠি শেষ করছেন এই বলে, ‘You are right in saying that the world, or a large part of it, appear to be bent on committing suicide. That may be an inevitable development of an evil seed in civilization that has grown.’’
এই বিষ পান করে স্বাধীনতার পর উন্নয়নের চাপে 6 কোটির বেশি মানুষ, যার বেশির ভাগই আদিবাসী ও দলিত, যারা ভূমিপুত্র, তারা তাদের জীবন ও জীবিকা হারিয়েছেন। তাদের নীরব রক্তক্ষরণ আমরা দেখতে পাইনি। আজ, বুদ্ধদেবের ওই উন্নয়নের হিংস্র রক্তপান আমরা প্রত্যক্ষ করছি। বুদ্ধদেব বলছেন, আমরা capital -এর বিরুদ্ধে নই, আমরা capitalist -দের বিরুদ্ধে। Bravo! মার্কসবাদের কি অপূর্ব ব্যাখ্যা। মার্কস তাঁর কবরে নড়েচড়ে উঠছেন!
অথচ, দেখুন, গান্ধী - রবীন্দ্রনাথ বর্ণিত সুস্থ গ্রাম সমাজ এখনও সম্ভব। কারণ ভারতের 80 শতাংশ মানুষ এখনও খুবই সহজ, সরল জীবন যাপন করেন। তাঁরা এই আগ্রাসী ভোগবাদী জীবনের অংশীদার নন। বদলাতে হবে বুদ্ধদেবের মত পুরু গালিচায় হাঁটা, ৩ টনি শীততাপ নিয়ন্ত্রিত অফিসে এবং গাড়িতে চলাফেরা করা মানুষের জীবন যাত্রার। তাঁরা মাত্র 15 থেকে 20 শতাংশ বা তারও অনেক কম। জাতীয় নমুনা সমীক্ষা জানাচ্ছে যে গ্রামে মাত্র .26 শতাংসের টিভি, .4 শতাংশের রেফ্রিজারেটার, .6 শতাংশের টেলিফোন, 67 শতাংসের পারসোনাল কমপিউটার (শহরাঞ্চলে 1.4 শতাংশ)। গ্রামে বা শহরে সাইকেল রিকশা বা ভ্যান রিকসা চালককে যখন জিজ্ঞেস করি মাসে কত রোজগার হয়, শুনতে পাই গড়ে খুব বেশি হলে দেড় হাজার টাকা। বাড়িতে কি কি স্থায়ী ভোগ্যবস্তু – যেমন খাট, টর্চ, পাখা ইত্যাদি আছে। উত্তর পাই কোনও কিছু না থাকারই মত। 1991 সালের আদম সুমারীর হিসেবে ভারতের 46 শতাংশ মানুষ বছরে গড়ে মাথাপিছু 6 টাকার স্থায়ী ভোগ্যপণ্য কেনে। অর্থাত, একটি 5 জনের পরিবার বছরে 30 টাকা। কি স্থায়ী ভোগ্যপণ্য পাওয়া যাবে 30 টাকায়?
এই যে বিরাট উত্পাদন ব্যবস্থা – ইস্পাত কারখানা, খনিব্যবস্থা, রাসায়নিক কারখানা, গাড়ির কারখানা ইত্যাদি – এর জন্য চাই রাস্তা, ব্রীজ, ফ্লাইওভার, রাস্তার আলো ব্যবস্থা, তার পুলিশি ব্যবস্থা ইত্যাদি আরও কত কি। ভোগ করবেন কে? ভারতের বাবু - বিবিরা। সিঙ্গুরে যে গাড়ির কারখানা সেই গাড়ি চড়বে কে? তার জন্য রাস্তা চাই, পেট্রল চাই। দেশে পেট্রল নাই। প্রতি বছরে দেড় লক্ষ কোটি টাকার মত পেট্রল আমদানী করতে হয়। দেশে ডলার নেই। তাই ঋণে ডুবে যাচ্ছে। 1970 সালে একজন ভারতীয়ের মাথায় ঋণ ছিল মাত্র 89 পয়সা। 2000 সালে হয় 8000 টাকার মত। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের রাজত্বের 60 শতাংশের বেশি ব্যয় হয় ঋণ পরিশোধ করতে।
সপ্তাহ, ৬ই এপ্রিল ২০০৭, শশিভূষণ দে স্ট্রীট, কলকাতা – ৭০০ ০১২
/articles/kaichau-gaurautabapauurana-kathaa