জল নিয়ে কিছু কথা
সম্পাদক অমর নস্করের প্রতিবেদন:
লাতুরের কথাই ধরা যাক। শহরটা গড়ে উঠেছিল মঞ্জিরা নদী তীরে। মানুষের কল্যাণেই এখন সেই নদী শুকিয়ে গিয়েছে। সরকার তো সবকিছুই জানে। কিন্তু জেনেও না জানার ভান করে থাকে। তাই বৃষ্টিপাতের সামান্য হেরফেরেই আজ এমন দুর্দশা দেশের।জল নিয়ে কিছু কথা বলতে হবে এমন একটা তাগিদ আমাকে কুরে কুরে খাচ্ছিল। যখন কাগজে খবর হল - মহেশতলার কিছু কিছু এলাকায় জলের সংকট মাটির অনেক গভীরে ! ক্রমশ সে সংকটের ব্যপ্তি প্রসারিত হচ্ছে - পরিধি ক্রমাগত বাড়ছে। জেলায় অন্যান্য এলাকাও গ্রাস করছে এই জলের সংকট । বড়ো বড়ো কিছু জনপ্রিয় সংবাদপত্রে ছাপাও হল এই নিদারুন খবরটি। ফ্রেন্ড কারখানার দৌলতে এলাকার পর এলাকায় জল দূষিত হচ্ছে। পুকুর, ডোবা, খাল - বিলে মিশে যাচ্ছে সে কেমিক্যালের বিষ। মাটির গভীর জলস্তরে সে বিষ হাত - পা ছড়িয়ে দিব্বি জীবন হত্যার ষড়যন্ত্র করছে। শুধু কি মানুষ ? প্রাণী মাত্রেই ‘জলই জীবন’। সে জল যদি তেষ্টা মেটাতে না পারে, তাহলে ?
কথা হল ক্ষুদ্র শিল্প ফ্রেড কারখানা। ঠিকই তো। সেই কারখানায় কত মানুষের জীবন সংগ্রামের চাকা ঘোরে। মানুষের জন্য সরকার। সরকার ক্ষুদ্র শিল্পে উত্সাহ দেবে এটাতো স্বাভাবিক! ঐ সঙ্গে সরকার তো নাগরিকদের জীবনকেই সুরক্ষিত রাখতে সাহায্য করবে ? তাহলে সরকারের দায়িত্ব যদি ক্ষুদ্র শিল্পকে মদত দেওয়া হয়, তেমনি এলাকার মানুষের জীবন সুরক্ষায়ও সমান দায়িত্ব বর্তায়। সেক্ষেত্রে ঐ এলাকায় যারা জীবনকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে, মানে জলকে দূষিত করছে তাদের বিরুদ্ধে কেন কোনো পদক্ষেপ নেই। তাছাড়া সবাইকে অনুমতি দেওয়া বা সমস্ত দপ্তর থেকে লাইসেন্স দেওয়ার সময় নিশ্চয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ থেকে অনুমোদিত করা হয়। তা যদি না হয় তা হলে যেকোন ব্যবসাইতো বেআইনি হবে।
এ ক্ষেত্রে কি কোনো অন্য রকম ? কিছু কিছু এলাকায় নলকূপের জলস্তর নীচে নেমে গেছে বলে গরম কালে জলসংকট দেখা দিচ্ছে। খবরে প্রকাশ। জলস্তর নেমে যাচ্ছে পুরো দেশ জুড়েই। কারণ বৃহত মালিক গোষ্ঠির ব্যাবসায়িক সাফল্যের দিকে সরকারের লক্ষ্যটা একটু বেশিই থাকে। এ সব সত্য কথা এখন বই পত্রে ছাপানোই থাকে। কারণ দেশ চালাতে হলে বৃহত পুঁজির তোয়াজ করতেই হবে ! জলের সংকট তৈরি করে বেশি মুনাফার জন্য বাজার ধরতে হবে ! তাই ওদের বোতল ভরা জল কিনে খেতে হবে। এবার বলুন তো ওরা জল পাচ্ছে কোথায় ? বোতলে ভরে বাজারে বিক্রি করছে যে জল, সে জল তো প্রকৃতির সম্পদ। সে সম্পদকে কারা তৃষ্ণার্ত মানুষের মুখ থেকে কেড়ে মুনাফার স্বপ্ন দেখছে ? কে কে তাদের মদত দিচ্ছে বন্ধু ! এই বোতল ভর্তি জল কতটা মিনারাল তার উত্তর কে দেবে, বা কে নেবে ?
লেখক কবি সাহিত্যিকদের মনোভাবকে পাঠকের দরবারে হাদির করার সংকল্প নিয়ে এি জল সংখ্যা। আপনাদের সমস্ত সরল মনে জলের যন্ত্রনাগুলোকে সংক্রামিত করতেই এই ক্ষুদ্র প্রয়াস।
বেহিসেবী জলের ব্যবহার (খবরে প্রকাশ)
যদি রিজার্ভ পুলিশ থাকতে পারে, রিজার্ভ সেনা থাকতে পারে, তবে রিজার্ভ জল কেন থাকবে না ? অর্থাত খরা মোকাবিলায় জল সংরক্ষণে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। একটি বিশেষ প্রতিবেদন।
ধন্যবাদ মশালা ক্রিকেট লিগ আই. পি. এল. -কে। তুমি না হলে তো দেশের খরা পরিস্থিতি নিয়ে এত আলোচনাই হত না। মহারাষ্ট্রের একটা বড় অংশ যখন জলের অভাবে শুকিয়ে মরছে, তখন খেলার জন্য মাঠে জল দেওয়ার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল বম্বে হাইকোর্ট। শুরুটা সেখানেই। তখনই রাজনীতিবীদরা হঠাত করেই দেশের খরা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে উঠলেন। অথচ তারও মাস খানেকের বেশি সময় ধরে তীব্র দহনে জ্বলছে দেশের এক বিস্তীর্ণ অংশ। মাটি ফুটিফাটা এক ফোঁটা জলের জন্য মানুষকে চাতক পাখির মতো অপেক্ষা করতে হচ্ছে।
খরা নিয়ে জ্বলন্ত প্রশ্নগুলি হল - স্বাধীনতার এত বছর পরেও কেন এখনও চাষ - আবাদের জন্য সেই বৃষ্টিপাতের উপর আমাদের নির্ভর করতে হবে ? কেন বছরের পর বছর খরা দেখেও সরকার হাত - পা গুটিয়ে বসে থাকে ? আর যখনই খরার প্রকোপ বৃদ্ধি পায়, তখনই কেন সরকার হতবুদ্ধি হয়ে পড়ে ? কেন সেচ প্রকল্প দিনের পর দিন ধরে পড়ে রয়েছে ? গত বছর – ‘স্টকহোম ওয়াটার প্রাইজ’ পেয়েছেন রাজেন্দ্র সিং। তিনি সরাসরি এই খরাকে ম্যান - মেড আখ্যা দিয়েছেন। তাঁর সাফ কথা, সরকারি নীতির ব্যর্থতার জন্যই বছরের পর বছর খরায় এত মানুষের প্রাণ যায়। তাঁর প্রশ্ন - যদি রিজার্ভ পুলিশ থাকতে পারে, রিজার্ভ সেনা থাকতে পারে, তবে রিজার্ভ জল কেন থাকবে না ? অর্থাত খরা মোকাবিলায় জল সংরক্ষণে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছেন তিনি। জল সংরক্ষণবিদরা বলেছেন - একটা সময় ছিল যখন মাটির তলায় জলস্তর অনেক বেশি ছিল।
তাই খরার প্রকোপ কম ছিল। পুকুর বা নদীর জলস্তর কমে গেলে, মাটির তলার ওই জলস্তরই সাপ্লাই লাইনের কাজ করত। ফলে রেহাই মিলত সাধারণ মানুষের। কিন্তু শহরের বিস্তারের সঙ্গে সঙ্গেই পালটে গিয়েছে সব কিছু, সব চিত্র। এখন পুর নীতিকে কোন রকম তোয়াক্কা না করেই গড়ে উঠেছে বহুতল। যাদের জলের উত্সই হল মাটির তলার জল। জলাশয় বুঝিয়ে গড়ে উঠছে রিয়েল এস্টেট। শহরের অবস্থা তো বলার অপেক্ষাই রাখে না, এমনকী গ্রামেও এখন আগের মতো পুকুর - ডোবার দেখা মেলে না। সাল্পাই লাইনের এই সমস্যা যত প্রকট হয়েছে, ততই সমস্যা গভীরতর হয়েছে। নদীর পাশে শহর - এটাই ছিল দস্ত্তর। কিন্তু এখন শুকিয়ে গিয়েছে সেই নদীও।
সেই কারণে খরার সমস্যা প্রকট হচ্ছে দিনকে দিন। যেমন লাতুরের কথাই ধরা যাক। শহরটা গড়ে উঠেছিল মঞ্জিরা নদী তীরে। মানুষের কল্যাণেই এখন সেই নদী শুকিয়ে গিয়েছে। সরকার তো সব কিছুই জানে। কিন্তু জেনেও না জানার ভান করে থাকে। তাই বৃষ্টিপাতের সামান্য হেরফেরেই আজ এমন দুর্দশা দেশের। জল সংরক্ষণ যে দেশের জন্য প্রয়োজনীয়, তা সম্প্রতি ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে বলেওছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তাঁর আহ্বান, আবহাওয়া দপ্তর বলছে - এবার ভালো বর্ষা হবে। তাই এবার থেকেই ওই জল সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রশ্ন হল - যা বলছেন, তা আদৌ বাস্তবায়িত হবে কি ?
এ প্রসঙ্গ যে কথা না বললেই নয় তা হল - আমাদের রাজ্যের প্রধান ফসল হল ধান। ঘটনাচক্রে ধানও জল নির্ভরশীল ফসল। রাজ্যের সেচ ব্যবস্থা এখনও তেমন উন্নত নয়। এখনই যদি এই বিষয়ে যথাযথ গুরুত্ব না দেওয়া হয়, তবে সুজলা - সুফলা বঙ্গদেশও আগামীদিনে বিদর্ভ -মারাঠাওয়াড়া হয়ে যাবে না, তা কিন্তু কেউ হলপ বলতে পারে না।
Source: Published at Gopalpur, Sarkarpool, South 24 Parganas, Pin -700143.
Path Alias
/articles/jala-naiyae-kaichau-kathaa-o-baehaisaebai-jalaera-bayabahaara
Post By: Hindi