আর্সেনিক বিষণের চমকপ্রদ এক ফলশ্রুতি “কালোচরণ অসুখ” (BFD) এখানেই সুপ্রকাশিত l জলে আর্সেনিকের মাত্রার সঙ্গে BFD ও মূত্রাশয়ের ক্যানসারের সম্পর্ক এখানেই সুপ্রতিষ্ঠিত l সবচেয়ে কম চার বত্সর বয়সি শিশুর মধ্যে হাইপারকেরাটোসিস দেখা গেছে, আর 23 বত্সর বয়সি মানুষের মধ্যে ক্যানসার l
তাইওয়ান
তাইওয়ানের আর্সেনিক বিষণ জগদ্বিখ্যাত l 1900-1910 সালে প্রথম নলকূপ বসানোর পর থেকেই আর্সেনিক বিষণ, যদিও তা বৈজ্ঞানিক ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় 1960 এর দশকে l তাইওয়ান থেকে আহৃত পরিবেশীয় আর্সেনিক বিষণের বৈজ্ঞানিক ধারণাবলী, এমনকী অনুসন্ধানের পদ্ধতি সমূহের অনেক কিছুই বিশ্ববিজ্ঞানকে সমৃদ্ধ করেছে l আর্সেনিক বিষণের চমকপ্রদ এক ফলশ্রুতি “কালোচরণ অসুখ” (BFD) এখানেই সুপ্রকাশিত l জলে আর্সেনিকের মাত্রার সঙ্গে BFD ও মূত্রাশয়ের ক্যানসারের সম্পর্ক এখানেই সুপ্রতিষ্ঠিত l সবচেয়ে কম চার বত্সর বয়সি শিশুর মধ্যে হাইপারকেরাটোসিস দেখা গেছে, আর 23 বত্সর বয়সি মানুষের মধ্যে ক্যানসার l ত্বকের ক্যানসারের থেকে হাইপারকেরাটোসিস এখানে 20 গুণ বেশি দেখা যায় l পুষ্টির অভাবে যে আর্সেনিক ঘটিত অসুখ বাড়ায়, তাও এখানেই লক্ষ্য করা গেছে অনেক আগে l ডায়াবেটিস ও অভ্যন্তরীণ ক্যানসারের সঙ্গে পেরিফেরাল ভ্যাসকুলার ডিসঅর্ডার, কার্ডিও ভ্যাসকুলার ডিজিও ও নিউরোলজিক্যাল অসুখ এখানে প্রচুর l
দক্ষিণ-পশ্চিম তাইওয়ান উপকূলে বিশ শতকের প্রথম বা দ্বিতীয় দশকে প্রথম আর্সেনিক সংক্রমণ দেখা যায় l 1950-এর দশকের শেষে উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে আর্সেনিক সংক্রমণ ঘটে l দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে ভূগর্ভজলে আর্সেনিক 10 থেকে 1800 µg /L, আর উত্তর-পূর্বে 10 থেকে 1820 µg /L l আর্সেনিক প্রধানত As (III) হিসাবে আসে l কোনও কোনও জলে মিথেন ও হিউমিক অ্যাসিড পাওয়া যায় l ভূগর্ভজলের কিছু আর্টেজিয় কুপ বিজারক পরিবেশের কিছু অ্যাকুইফারে অবস্থিত l অগভীর বড় পাতকুয়োর জলে আর্সেনিক কম l এখানকার কালোচরণ অসুখে ( যা মেকসিকোতেও দেখা গেছে ), আর্সেনিকে রক্ত সঞ্চালনের বাধার জন্য যে পচন ধরায়, তার ফলেই পা কালো হয়ে যায় l এর কারণ সম্ভবত সেখানকার মানুষের জিন বৈষিষ্ট বা পায়ের চামড়ার মধ্য দিয়ে ঢোকা আর্সেনিক l 1968 সাল থেকে আর্সেনিক বিষণের খবর আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান মানচিত্রে ভালভাবে ঢুকে পড়ে l 300 বর্গকিমি অঞ্চলের দেড় লক্ষ মানুষের মধ্যে আর্সেনিক অসুস্থতা দেখা যায় l 1985 সাল পর্যন্ত 1936 জনের BFD দেখা গেছে। বাঙালিদের মধ্যে এখনও BFD বিশেষ দেখা যায়নি, দেখা যায় মেলানোসিস, কেরাটোসিস, চামড়ার ও অভ্যন্তরীণ নানারকম ক্যানসার।
চিন প্রজাতন্ত্র
চিনের উত্তর-পশ্চিম দিকে জিনজিয়াং ও উত্তর-পূর্বদিকে অন্তর্মোঙ্গোলিয়ার সাংসি প্রদেশ ও অন্যত্র ভূগর্ভ জলে আর্সেনিকের প্রাদুর্ভাব 1980-এর দশকে ধরা পড়ে ( 4.4 ) l এই অন্তর্মোঙ্গোলিয়া ইতিহাস খ্যাত চেঙ্গিজ খাঁজ দেশ l এছাড়া দক্ষিণ-পূর্বের গুইঝাউ অঞ্চলে আর্সেনিক-সমৃদ্ধ কয়লা পোড়ানোর জন্য ও দক্ষিণ-পশ্চিমের ইউনান অঞ্চলে ধাতু নিষ্কাশন ও কয়লা পোড়ানোর জন্য পরিবেশে আর্সেনিক ছড়ায় l জিনজিয়াং ও সাংসি (1996) অঞ্চলে ভূগর্ভজলের আর্সেনিকের মাত্রা 4400 µg /L পর্যন্ত পাওয়া যায় l 1996 সালে সাংসি প্রদেশের ডাটং অববাহিকায় দশ লক্ষ জনসংখ্যার মধ্যে অন্তত 3000 আর্সেনিক রোগী পাওয়া গেছে l অতি সম্প্রতি উত্তর-মধ্য ও উত্তর-পূর্ব চিনের লিয়ায়োনিং, জিলিন ও নিংসিয়া প্রদেশের পানীয় জলে কিছু কিছু আর্সেনিক আধিক্য দেখা যাচ্ছে (2001) l 1989 সালে অন্তর্মোঙ্গোলিয়ার স্ব-শাসিত অঞ্চলে বড় আকারে সমীক্ষা হয় পাঁচটি শহর ও এগারোটি কাউণ্টিতে l ছয় লক্ষ জনসংখ্যার মধ্যে 1774 জন রোগী আর্সেনিক আক্রান্ত হিসেবে ধরা পড়ে l জলে আর্সেনিকের মাত্রা 50 µg /L এর অধিক ( 1,800 µg /L ) l এখানে পীত নদীর সমভূমিতে দুটি আর্সেনিক অধ্যুষিত অঞ্চল হল বামেন ও টুমেট, আক্রান্ত বাউতাউ ও তোগোগ শহর এই অঞ্চলেই l এইসব অঞ্চলের প্রায় তিন লক্ষ মানুষজন আর্সেনিক ঘটিত জলপান করেন l এই অঞ্চলের পুরানো হ্রদতলবর্তী সেডিমেণ্টই আর্সেনিকের উত্স l এখানে নলকূপ বসানো হয় l 1970-এর দশকের শেষ দিকে l এবং এই অঞ্চলের ভূগর্ভ জল বিজারণধর্মী, জলে আয়রন (II), ম্যাঙ্গানিজ (II), অ্যামোনিয়াম বেশিl
রোগ লক্ষণ সমূহের মধ্যে ত্বকের ক্যানসার, বাউয়েন্স ডিজিজ, সেণ্ট্রাল ও পেরিফেরাল নিউরাইটিস, রেনোস লক্ষণাবলী, গ্যাসট্রোএনটেরাইটিস, লিভারের গোলমাল, হৃদপিণ্ডের নানরকম গোলযোগ ইত্যাদি অসুখ-বিসুখ আর্সেনিকের জন্য বেড়ে গেছে l এ অঞ্চলের জলে ফ্লোরিনের আধিক্যও দেখা গেছে l তিন থেকে আশি বত্সরের মানুষজন আক্রান্ত, 40-49 বত্সর বয়সিরাই বেশি l মঙ্গোলিয়াতে আর্সেনিক ঘটিত কারণে মানসিক প্রতিবন্ধিতা বেশি, যেমন দেখা গেছে থাইল্যাণ্ডের রন পিরুন অঞ্চলে l
জিনজিয়াং-এ আর্সেনিক যুক্ত পানীয় জলের বিকল্প ব্যবস্থা এখন হয়েছে, কিন্তু অন্যত্র হয়নি l গ্রামের দরিদ্র মানুষ বেশি ভুগছেন l 1960-এর দশকে আর্টেজিও কুপে চিনের প্রথম আর্সেনিক ঘটিত অসুখ-বিসুখ ধরা পড়ে l লিটার প্রতি 1200 µg আর্সেনিক পাওয়া গেছে l জলে ফ্লোরাইডও এই অঞ্চলে বেশি l
ইউনান অঞ্চলে টিন খনিজ উত্তোলন ও ধাতু নিষ্কাশনে নিঃসৃত আর্সেনিকে বর্দ্ধিত ক্যানসার হারের সংবাদ আসে 1985 সালে l 100,000-এ 717 জন, যা কণ্ট্রোলের চেয়ে 82 গুণ বেশি (1993) l পেশায় নিযুক্ত থাকার জন্যে অধিক আর্সেনিকে উন্মুক্ত হবার দরুন তিরিশ হাজার জন মানুষ আর্সেনিকের অসুখে ভুগছে l
দক্ষিণ-পূর্বের গুইঝাউ প্রদেশে এক লক্ষের মতো মানুষজন আর্সেনিক আক্রান্ত l অধিক আর্সেনিকযুক্ত কয়লা (90-2100 মিগ্রা-কেজি) রান্নাবান্না ও শস্য শুকানোর জন্য ব্যবহারের ফলে পরিবেশে আর্সেনিক ছড়ায় l জলে কিন্তু আর্সেনিক কম, বাতাসে বেশি ( 40-130 µg প্রতি মিটার বাতাসে ) l
सम्पर्क
মণীন্দ্র নারায়ণ মজুমদার
প্রাক্তন অধ্যাপক, রসায়ন বিভাগ, ডীন ফ্যাকল্টি অফ সায়েন্স, কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়
Source: Extract from the book titled “Banglay Arsenic: Prokiti O Pratikar” written by Prof. Manindra Narayan Majumder
Path Alias
/articles/arasaenaika-paidaita-taaioyaana-o-caina-parajaatanataraera-samkasaipata-baibarana
Post By: Hindi