মরুভূমিতে ত্রিশ হাত গভীর কুণ্ডে পরিপূর্ণ জল রয়েছে, অথচ ত্রিশ ফোঁটা জলও বালিতে শুষে নেবে না l কোনো বড় বাস্তুকারই হয়তো এ রকম পোক্ত জল নিরোধক পলেস্তরার আশ্বাস নাও দিতে পারতে পারে, চেলওয়াজরা কিন্তু এই আশ্বাস দিয়ে থাকে l
‘প্রবাহিত জলে শ্যাওলা জমে না’- এই প্রবাদটি রাজস্থানে এসে থমকে যায় l এখানে যেসব ‘কুণ্ডি’ দেখা যায়, তাতে সারা বছর ধরে, এমনকী তার থেকেও বেশি সময় ধরে জমে থাকা জলও সম্পূর্ণ নির্মল থাকে lব্যবস্থাটা অবশ্য একই : সেই বৃষ্টির জল অর্থাত্ ‘পালর পানি’- কে এক পরিচ্ছন্ন জায়গায় সংগ্রহ করা l কুণ্ডি, কুণ্ড, টাঁকা - নাম অনেক, চেহারাও আলাদা আলাদা, কিন্তু কাজ সেই একই, আজকের বর্ষার প্রতিটি বৃষ্টি বিন্দুকে আগামীকালের জন্য সংগ্রহ করে রাখা l কুণ্ডি সব জায়গায় পাওয়া যায় l দুর্গম পাহাড়ের ওপর তৈরী দুর্গে, মন্দিরে, পাহাড়ের পাদদেশে, ঘরের উঠোনে, ছাতে, গ্রামের ভেতরে, গ্রামের বাইরে নির্জন স্থানে, বালির মধ্যে, চাষের জমিতে - সব জায়গায় সব সময় কুণ্ডি তৈরী হয়েছে l তিন চারশো বছর আগের কুণ্ডি যেমন পাওয়া যায়, সেরকম অল্প কয়েকদিন আগে তৈরি হয়েছে সেরকম কুণ্ডিও পাওয়া যাবে l এমনকী স্টার টি.ভি-র অ্যাণ্টেনার ঠিক নীচেও হয়তো কুণ্ডি পাওয়া যাবে l
যেখানে যতটা জায়গা পাওয়া সম্ভব- সেখানে সেই জায়গাটুকু চুন সুরকি দিয়ে পলেস্তরা করে একটা পাকা উঠোনের মতো তৈরি করে নেওয়া হয় l এই উঠোন হয় ঢালওয়ালা l একদিক থেকে অন্যদিকে, অথবা উঠোন বড় হলে চারপাশ থেকে কেন্দ্রের দিকে রাখা হয় এই ঢাল l উঠোনের পরিসর অনুসারে, বর্ষায় সেখানে কতটা জল বর্ষিত হতে পারে এ সব কিছু বিবেচনা করেই কেন্দ্রে কুণ্ড তৈরি করা হবে l আর কুণ্ডের ভেতরের পলেস্তরা এমন হবে, যাতে এক বিন্দুও জল নষ্ট না হয়, শুধু তাই নয় তা যেন সারা বছর সুরক্ষিত ও পরিষ্কার থাকে l
চারপাশের যে উঠোন থেকে বর্ষার সময় কুণ্ডিতে জল আসে, তাকে ‘আগৌর’ বলে l শব্দটা এসেছে ‘আগৌরণা’ ক্রিয়াপদ থেকে l ‘সংগ্রহ অর্থে’ সারা বছরই আগৌর যথেষ্ট পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা হয় l বর্ষার আগে তো যথেষ্ট যত্ন সহকারে চলে এটি পরিষ্কারের কাজ l জুতো, চপ্পল এসব আগৌরে নিষিদ্ধ l
অগৌরের ঢাল দিয়ে বয়ে আসা জল কুণ্ডিতে জমা হয় l কুণ্ডির ভিতর গোলাকার রাখা ‘আয়রো’ এবং ‘সুরথো’- র মধ্য দিয়ে এই জল কুণ্ডতে ঢোকে আয়রো এবং সুরাথো হল এক ধরনের ছিদ্র বা নালি l কোথাও কোথাও এর আরেক নাম ‘ইন্ডু’ l আগৌর যতই পরিষ্কার রাখা হোক, বর্ষার জলে কিছু বালি, খড়কুটো বয়ে আসেই l এসব ময়লা যাতে কুণ্ডির ভিতর গিয়ে পড়তে না পারে তার জন্য নালাগুলোতে জাল লাগানো থাকে l বড় কুণ্ডিগুলিতে সারা বছর জল টাটকা রাখার জন্য বিশেষ জানালা কেটে আলো হাওয়া ঢোকার ব্যবস্থা করা হয় l
ছোট হোক বা বড় হোক, কুণ্ডি কখনও খোলা থাকে না l সমাজের চোখে সেটা অশোভন l আর জলের কাজে শোভা তো চাইই l সৌন্দর্য, শুচিতা, পরিচ্ছন্নতা এখানে একই সঙ্গে বর্তমান l
কুণ্ডির মুখ সব সময় গোলাকার হবে এবং ঢাকনা গম্বুজাকার l মন্দির, মসজিদের মতো উচু হয়ে ওঠা গম্বুজ দৃশ্যত কুণ্ডিকে সুন্দর করে তোলে l যেখানে পাথরের সুদীর্ঘ স্তর পাওয়া যায়, সেখানে গম্বুজের বদলে পাথরের বড় পাটা ঢাকনা হিসেবে ব্যবহার করার প্রচলন রয়েছে l গম্বুজ বা পাথরের পাটা, যা দিয়েই কুণ্ডি ঢাকা হোক না কেন- তার এক কোণায় লোহা বা কাঠের আরও একটা ছোট ঢাকনা লাগানো হবে l এই ছোট মুখটি প্রতিদিনের জল নেওয়ার কাজে লাগাবে l
অনেক কুণ্ডই প্রায় ত্রিশ চল্লিশ হাত গভীর l তাই কোন গভীর কুয়ো থেকে যেভাবে জল তোলা হয়, এই কুণ্ড থেকে জল তোলার প্রক্রিয়া সেরকমই l জল তোলার জন্য পাড়, তাতে ওঠার জন্য পাঁচ সাত ধাপ সিঁড়ি, জল তোলার সুবিধার জন্য চরকি বা ঘড়ঘড়ি l চুরু অঞ্চলের কয়েক জায়গায় খুবই বড় আর গভীর কুণ্ড দেখা যায় l গভীরতার জন্যই এদের চরকি বা কপিকল গুলো খুবই শক্তপোক্ত l কেননা অত তলা থেকে জল নিয়ে বালতি যখন ওপরে উঠতে থাকে, তখন তার পুরো ওজন তো পড়ে এদেরই ওপর l তাই দুই দিকে দুটি মিনারের মতো স্তম্ভে চরকি বসানো হয় স্থায়ীভাবে, কোথাও কোথাও আবার চারটি স্তম্ভে চরকি লাগানো হয়েছে এমন কুণ্ডিও দেখা যায় l
জায়গা কম পাওয়া গেলে কুণ্ড ছোট হবে এবং আগৌর থাকবে কিছুটা উঁচুতে l আসলে কোনো পরিবার বা সমাজের কাজে লাগছে বলেই তো কুণ্ডের জন্য জায়গার অভাব ঘটেছে l তাই এক্ষেত্রে চারপাশের ব্যবহৃত অপরিচ্ছন্ন জমি থেকে ওই কুণ্ডের আগৌরকে আলাদা রাখাতে সেটিকে বারান্দার মতো উঁচু করে দেওয়া হয় l চাষের জমি বড় হওয়ায় মরুভূমিতে গ্রাম এবং খেতের মধ্যে দূরত্ব পড়ে যায় অনেকটাই, তাই সারা দিন খেতে কাজ করতে হলে কাছাকাছি জলের উত্স থাকাটা খুবই প্রয়োজন l এই প্রয়োজন মেটাতে ক্ষেতের মধ্যেই কিছু দূরে দূরে ছোট বড় কুণ্ডি তৈরি করা হয় l
বালুকাময় এলাকায় যেখানে ভৌমজল একশো দুশো হাতেরও বেশি গভীরে, যা আবার বেশিরভাগই লবণাক্ত, সেখানেও দেখা যায় কুণ্ডি l আদিগন্ত বালির ভিতর কুণ্ডি মাত্র কুড়ি ত্রিশ হাত গভীর l এতে যে জল জমে, তা যদি চুঁইয়ে চুঁইয়ে বালিতে শুষে যেতে থাকে, তাহলে পরিপূর্ণ কুণ্ডি খালি হয়ে যেতে খুব একটা দেরি হবে না l তাই কুণ্ডের ভিতর জল নিরোধক পলেস্তরা হয় সর্বোত্তম l ছোট বড় সব কুণ্ডেই থাকে একশো ভাগ পলেস্তরা l এই কাজে টুকরো পাথর অথবা পাথরের পাটা সরাসরি ব্যবহার করা হয় l দুটো পাথর পর পর বসানো হলে জোড়ের মাঝে যে সূক্ষ্ম ফাঁক থেকে যায়, তা মিহি চুনের প্রলেপ দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয় l মরুভূমিতে ত্রিশ হাত গভীর কুণ্ডে পরিপূর্ণ জল রয়েছে, অথচ ত্রিশ ফোঁটা জলও বালিতে শুষে নেবে না l কোনো বড় বাস্তুকারই হয়তো এ রকম পোক্ত জল নিরোধক পলেস্তরার আশ্বাস নাও দিতে পারতে পারে, চেলওয়াজরা কিন্তু এই আশ্বাস দিয়ে থাকে l
যত সাবধানতার সঙ্গেই আগৌর পরিষ্কার করা হোক না কেন, কিছুটা বালি শেষ পর্যন্ত কুণ্ডে গিয়ে পড়েই l এজন্য কখনো কখনো বছরের শুরুতে চৈত্র মাসে কুণ্ডের ভিতরে নেমে তা পরিষ্কার করতে হয় l নীচে নামার সুবিধা রাখতে তাই পলেস্তরা করার সময়েই কুণ্ডের বৃত্তাকার দেওয়ালে এক হাত অন্তর পাথরের ধাপ বসিয়ে দেওয়া থাকে l
কুণ্ডের মেঝেতে জমা হওয়া বালি যাতে সহজে তুলে আনা যায়, সে ব্যাপারেও থাকে সুচিন্তিত পরিকল্পনা। মেঝেটি তৈরি হয় কড়াইয়ের মতো করে ( যাতে সমস্ত বালি এসে কেন্দ্রে জমা হতে পারে ) এর নাম ‘খামারিয়ো’ বা ‘কুণ্ডালিয়ো’ l তবে ওপরে আগৌরে এত বেশি সাবধানতা বজায় রাখা হয় যে খামারিয়ো থেকে বালি তোলার কাজ দশ থেকে কুড়ি বছর পর এক আধবার করলেই চলে l একটি প্রজন্ম কুণ্ডকে এতটাই আগলে রাখে যে পরবর্তী প্রজন্মই সিঁড়ি দিয়ে নীচে নামার সুযোগ পায় l পরবর্তীকালে সরকার কোথাও কোথাও জল সরবরাহের আধুনিক ব্যবস্থা করেছে l যেসব স্থানে আজ কুণ্ডিকে বাঁচিয়ে রাখার এই বিশাল ঐতিহ্য অনেকটাই কমে গেছে l
ব্যক্তিগত এবং সর্বজনীন, দুই রকম কুণ্ডই দেখা যায় l ব্যক্তিগত হলে এগুলি ঘরের সামনে, উঠোনে, হাতায়, পিছনে ও বেড়ায় পাশে থাকে l আর সর্বজনীন কুণ্ড সাধারণত পঞ্চায়েতের খাস জমিতে অথবা দুটো গ্রামের মাঝখানেই হয় l বড় কুণ্ডের ভেতরে প্রবেশ করার জন্য দরজার ব্যবস্থা থাকে এবং সামনে সাধারণ দুটো চৌবাচ্চা রাখা হয় l একটা ছোট, অন্যটা বড় l একটা উঁচু একটা নিচু l ‘খেল’, ‘থালা’, ‘হওয়াড়ো’ কিংবা ‘উবারা’- প্রভৃতি বিভিন্ন নামে এদের ডাকা হয় l আশেপাশের ছাগল, ভেড়া, উট ও গরুর জন্য এখানে জল ভরে রাখা হয়l
সর্বজনীন কুণ্ড গ্রামের মানুষই তৈরি করে l জলের জন্য শ্রমদান পুণ্যের কাজ l কোনো পরিবার বিশেষ কোনো উপলক্ষে প্রায়ই সর্বজনীন কুণ্ড নির্মাণের সংকল্প নেয় l তবে তা বাস্তবে রূপায়ণ করতে গ্রামের সব মানুষই সহযোগিতা করে l কখনো কখনো কোনো সম্পদ পরিবার সার্বজনীন কুণ্ড তৈরি করে তার রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব অন্য কোনো পরিবারের হাতে তুলে দেয় l কুণ্ডের বড় হাতার মধ্যে আগৌরের বাইরে এই পরিবারের থাকার ব্যবস্থাও করা হয় l এই ব্যবস্থা দুই পরিবারের পক্ষ থেকেই বংশানুক্রমিকভাবে চলতে থাকে l কুণ্ড নির্মাতা সচ্ছল গৃহকর্তা সম্পত্তির একটা অংশ কুণ্ড দেখাশোনা করার জন্য আলাদা করে রেখে দেয়, এবং এই ব্যবস্থা পুরুষানুক্রমিক ভাবে চলতে থাকে l এখনও রাজস্থানে এমন অনেক কুণ্ড আছে যেগুলো তৈরি করিয়েছে যে পরিবার, তারা হয়তো ব্যবসা অথবা চাকরির খাতিরে এখন আসাম, বাংলা বা মুম্বইতে প্রবাসী, অথচ এগুলি দেখাশোনার ভার দেওয়া হয়েছিল যে পরিবারের ওপর - তারা এখনও কুণ্ডতেই বসবাস করছে l এই বড় বড় কুণ্ডগুলি আজও বর্ষার জল সঞ্চয় করে রাখে এবং যে কোন পৌরসভার সরবরাহ করা জলের চেয়ে শুদ্ধ ও নির্মল জল সঞ্চয় করে রাখে এবং যে কোন পৌরসভার সরবরাহ করা জলের চেয়ে শুদ্ধ ও নির্মল জল সারা বছর জোগান দিয়ে যেতে সক্ষম l
আজ কোথাও কোথাও ভাঙাচোরা কুণ্ড দেখা যায় l অনেক জায়গায় জলও খারাপ হয়ে গিয়াছে l কিন্তু এসবই, সমাজে ভাঙনের সঙ্গে সমানুপাতিক হারেই হয়েছে l এতে পদ্ধতির নিজস্ব কোন ত্রুটি নেই l এমনকী শতাব্দী প্রাচীন এই ব্যবস্থা তো বর্তমানের ব্যয়সাপেক্ষ আর কাণ্ডজ্ঞনহীন পরিকল্পনাগুলোর ভুল ত্রুটিও ঢেকে দেবার ক্ষমতা রাখে l কিছুদিন আগে এই এলাকাগুলিতে জল সমস্যার সমাধানকল্পে অনেকগুলো নলকূপ আর হ্যাণ্ড পাম্প বসানো হয় l কিন্তু দেখা গেল সবগুলোর জলই লবণাক্ত l মিষ্টি পানীয় জল এখনও একমাত্র এই কুণ্ডগুলিতেই পাওয়া সম্ভব l অতএব পরে যখন বুদ্ধি এল, তখন এই কুণ্ডিগুলোর ওপরেই হ্যাণ্ড পাম্প বসিয়ে দেওয়া হয় l বহুল প্রচারিত ইন্দ্রিরা গান্ধী নহর থেকে এসব অঞ্চলে কোথাও কোথাও পানীয় জল সরবরাহের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল l কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে সরকারি ট্যাংকে জল সংগ্রহ করা হল আবার কিছু ক্ষেত্রে পুরোনো কুণ্ডগুলোকেও এই কাজে ব্যবহার করা হয়েছে l
এই কুণ্ডগুলি অতীত কালের হলেও বর্তমান সময়কেও এরা প্রত্যক্ষ করছে l সেই হিসেবে এগুলি সময়সিদ্ধ l এদের আর একটা বৈশিষ্ট্য হল স্বয়ংসম্পূর্ণতা l এগুলি তৈরি করতে কখনই অন্য কোন জায়গা থেকে নির্মাণ সামগ্রী আমদানি করে আনতে হয়নি l মরুভূমিতে জল সংরক্ষণে যে সুবিশাল ঐতিহ্যবাহী ব্যবস্থাপনা চালু রয়েছে, তার সবচেয়ে বড় গুণ হল - যেখানে যে উপকরণ পাওয়া যায়, সেখানে তা দিয়েই মজবুত পরিকাঠামো তৈরি করার স্থিতিস্থাপক মানসিকতা l কোনো জায়গায় হয়তো বিশেষ একটা উপকরণ পাওয়া যায়, কিন্তু অন্যত্র সেটা নেই তবুও, সেখানেও কুণ্ড তৈরি হবে l
যেখানে পাথরের পাটা পাওয়া যায়, সেখানে কুণ্ডের প্রধান অংশ তৈরি হয় পাথরের পাটা দিয়েই l কোথাও হয়ত পাথর নেই কিন্তু সেখানে ‘ফোগ’ নামের এক ধরনের গাছ আছে, সহযোগিতা পাওয়া যায় ফোগ গাছের l এই গাছের ডালগুলিকে একটা অন্যটার সঙ্গে গেঁথে, ফাঁস লাগিয়ে কুণ্ডের ওপর গম্বুজাকৃতি ঢাকনার কাঠামোটি তৈরী করা হয় l এর ওপর থাকে বালি, মাটি ও চুনের মোটা প্রলেপ l গম্বুজের ওপরে ওঠার জন্য ভেতরে গাঁথা কাঠের কিছু অংশ বাইরে বের করে রাখা হয় l মাঝখানে জল তোলার জায়গা l বর্ষার জল কুণ্ডের চারপাশে সেই আয়রো নামের ছিদ্র দিয়েই ভেতরে যায়, কিন্তু পাথরের তৈরি কুণ্ডের গায়ে যেমন একাধিক ছিদ্র থাকে, ফোগ কাঠের কুণ্ডতে তা থাকে না l সেখানে ছিদ্র সবসময় একটি l কুণ্ডের ব্যাস হয় সাধারণত সাত আট হাত এবং উচ্চতা প্রায় চার হাত l আর যে ছিদ্র দিয়ে জল কুণ্ডে প্রবেশ করে তা এক বিত্তা l বর্ষার জল কুণ্ডতে সঞ্চিত হওয়ার পর এই ছিদ্রটি কাপড়ে জড়ানো একটি খিল দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয় l ফোগ গাছের কুণ্ডগুলো আলাদা আলাদা আগৌরের বদলে একটাই বড় আগৌরের ভেতর নির্মাণ করার চল আছে l অনেকটা কুঁই-এর ধরনের l আগৌরের পাশে লেপা পোঁছা ঘর আর সেই রকমই পরিচ্ছন্ন কুণ্ডগুলো চারপাশে ছড়ানো সীমাহীন মরুভূমির ভেতর যেন পরস্পরের সঙ্গে লুকোচুরি খেলতে থাকে l
রাজস্থানের মানুষের রঙের প্রতি এক বিশেষ আকর্ষণ দেখা যায় l জীবনের সুখ দুঃখের ওঠা পড়ার সঙ্গে সঙ্গে এখানে লেহেঙ্গা, ওড়না আর জমকালো রঙের পাগড়িগুলোও রঙ পালটায় l কুণ্ডগুলো কিন্তু শুধু সাদা রঙেই রাঙানো হয় l এখানে প্রখর রোদ আর গরমও প্রচণ্ড, কুণ্ডগুলিতে যদি কোনো গাঢ় রঙের প্রলেপ দেওয়া হয়, তাহলে তা বাইরের উত্তাপ শুষে নিয়ে ভেতরের সঞ্চিত জলকেও প্রভাবিত করবে l তাই এখানকার রঙিন সমাজও কুণ্ডগুলিতে সাদা ছাড়া আর কোনো রঙ চাপায় না l সাদা রঙ রৌদ্রকে প্রতিফলিত করে l ফোগ কাঠ দিয়ে তৈরি গম্বুজও রৌদ্রে গরম হয় না, সহজে ফেটেও যায় না, ভেতরে জলও অনায়াসে ঠাণ্ডা থাকে l
কিছুদিন আগে সরকারি কোন এক বিভাগ কোন এক নতুন পরিকল্পনা অনুসারে এ এলাকায় ফোগের তৈরি কুণ্ডগুলোর ওপর কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষা চালায় l গম্বুজ তৈরিতে ফোগের বদলে সিমেণ্ট ব্যবহার করা হয় l যারা পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিল, তারা হয়তো ভেবেছিল তাদের তৈরী নতুন কুণ্ডগুলি বেশি মজবুত হবে l কিন্তু সেরকম হল না l সিমেণ্টের গম্বুজ এখানকার প্রচণ্ড গরম সহ্য করতে না পেরে কুণ্ডের ভেতরেই ভেঙে পড়ে l নতুন কুণ্ডগুলিতে ভেতরের দেয়ালে পলেস্তরা দেওয়ার কাজও চুন সুরকির বদলে সিমেণ্ট দিয়ে করা হয়েছিল l তাই সেখানেও দেখা দিল অসংখ্য ফাটল l এই ফাটল ভরাট করতে আলকাতরা ব্যবহার করা হল l মরুভূমির উত্তাপে সেই আলকাতরাও গলে গলে, বর্ষার সঞ্চিত জল ফাটল পথে বালির ভেতর চলে গেল l শেষমেষ সেখানকার মানুষ আবার ফোগ ও চুন সুরকি দিয়ে সেই স্বয়ংসিদ্ধ কুণ্ড তৈরি করে নিতে বাধ্য হয় l আধুনিক উপকরণ যে জল সংকট ডেকে এনেছিল, তার সমাধান এইভাবেই হল l
মরুভূমিতে কোথাও কোথাও খড়িয়া পাথরের স্তর মাটির অনেক কাছে, অর্থাত্ মাত্র চার-পাঁচ হাত নীচেই পাওয়া যায় l তখন সেখানে কুঁই-তে জল জমে l কিন্তু খড়িয়া পাথর যদি কম গভীরতাতেই মেলে, তাহলে তাতে সারা বছর ধরে কলসি ভরানোর মতো জল পাওয়া যাবে নাl তাই এসব এলাকায় কুণ্ড তৈরিতে ওই খড়িয়া পাথর যদি পাওয়া যাবে না l তাই এসব এলাকায় কুণ্ড তৈরিতে ওই খড়িয়া পাথর ব্যবহার করা হয় l পাথরের বড় বড় চাঁই খাদান থেকে ভেঙে এনে কাঠের আগুনে পোড়ালে একটা নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় তা ফেটে গিয়ে ছোট ছোট টুকরো হয়ে যায় l এরপর টুকরোগুলোকে গুঁড়ো করা হয় l আগৌর নির্বাচন করে কুণ্ড খোঁড়ার পর ভেতরের পলেস্তরা ও গম্বুজ বানাতে এই গুঁড়ো ব্যবহার করা হয় l পাঁচ ছয় হাত ব্যাসওয়ালা কুণ্ডের গম্বুজগুলো পুরু থাকে এক বিত্তা l এর ওপর দুজন মহিলাও যদি দাঁড়িয়ে জল তোলে, তাহলেও গম্বুজ ভাঙবে না l
মরুভূমিতে কোথাও কোথাও লম্বা পাথরের চাটান চলে গেছে l এই চাটান থেকেও প্রয়োজনীয় পাথর পাওয়া সম্ভব l এ পাথর দিয়ে বিশাল বিশাল কুণ্ড তৈরি হয় l চাটান থেকে পাওয়া পাথরের পাটাগুলো যথেষ্ট বড় বড় l প্রায় দু-হাত চওড়া আর লম্বাতেও প্রায় চোদ্দোহাত l তাই যত বড় আগৌরই হোক আর যত বেশি জলই কুণ্ডে জমা হোক, এই পাটা দিয়ে ঢেকে তত বড় কুণ্ডই বানিয়ে তোলা সম্ভব l ঘর ছোটই হোক বা বড়, কাঁচাই হোক কী পাকা- কুণ্ড কিন্তু তৈরি হবে পাকাপাকিভাবেই l মরুভূমির গ্রামগুলি পরস্পরের থেকে অনেক দূরে l জনসংখ্যাও কম l এরকম ছড়িয়ে থাকা গ্রামগুলিতে জল সরবরাহের কোনো কেন্দ্রীয় ব্যবস্থা গড়ে তোলা প্রায় অসম্ভব l তাই এখানকার সমাজ জল সংক্রান্ত সমস্ত উদ্যোগ যতটা সম্ভব বিকেন্দ্রিকরণ করে সে দায়িত্ব নিজেদের মধ্যে যেন বিন্দু বিন্দু করে ভাগ করে নিয়েছে l ফলে পুরো বিষয়টা নীরস অথবা যান্ত্রিক একটা অভ্যাস না হয়ে সামগ্রিক এক চেতনায় পরিণত হয়েছে l জয়সলমেরের গ্রামগুলিতে গেলে বোঝা যাবে এই কুণ্ডগুলিকে কত সুন্দর করে তোলা সম্ভব l
এক একটা গ্রামে বড়জোর পনেরো থেকে কুড়িটা পরিবারের বাস l বর্ষা উল্লেখযোগ্যভাবে কম l এমনকী জয়সলমের অঞ্চলের গড় বৃষ্টির থেকেও এখানকার বর্ষণের পরিমাণ কম l এখানে দেখা যায় প্রতিটা ঘরের সামনে বড় মতো একটা বারান্দা তৈরি করা হয়েছে l বারান্দার ওপরে এবং নীচের দেওয়ালে রামরজ, হলুদ ও গিরিমাটি দিয়ে সুন্দর আলপনা করা, যেন একটা রঙিন গালিচা বিছানো রয়েছে l বারান্দার ওপরেই গৃহস্থালির প্রতিদিনের সমস্ত কাজ l আনাজপাতি শুকোনো, বাচ্চাদের খেলা, সন্ধ্যায় বড়দের মজলিস বসে, আর ঘরে অতিথি এলে, রাত্রে তার শোয়ার ব্যবস্থাও এই বারান্দার ওপরেই l এটা কিন্তু শুধুই একটা বারান্দা নয়, একটা কুণ্ডও l ঘরের ছাত, উঠোন এমনকী সামনের ছোট মাঠের ওপর বর্ষিত সমস্ত জল এই কুণ্ডতে জমা হয় l কোনো বছর যদি বর্ষার জলে কুণ্ড না ভরে? কুণ্ড কিন্তু ভরিয়ে নিতেই হবে তা না হলে সারা বছর চলবে কিভাবে l তাই উটের গাড়ি করে কোনো কুয়ো বা পুকুর থেকে জল নিয়ে এসে এটি ভরিয়ে নেওয়া হয় l
কুণ্ডি কুণ্ডর মতোই হল টাঁকাগুলি l এতে সাধারণত উঠোনের বদলে বাড়ির ছাতে বর্ষিত জল সংগ্রহ করা হয় l যে বাড়ির ছাত যত বড়, অনুপাতিক হারে সেই বাড়ির তত বড় টাঁকা l অবশ্য পরিবারের সদস্য সংখ্যা ও তাদের জলের প্রয়োজনীয়তার ওপরও নির্ভর করে টাঁকার আয়তন l মরুভূমিতে গ্রাম ও শহরের বাড়িগুলির ছাদ সবসময় হালকা ঢাল রেখে তৈরি হয়, যাতে বর্ষার সমস্ত জল গড়িয়ে এসে টাঁকাতে জমা হতে পারে l ঢালের মুখের দিকে থাকে একটি পরিষ্কার নালি l এতে জলের সঙ্গে বয়ে আসা ময়লা আটকানোরও ব্যবস্থা করা থাকে l ফলে পরিষ্কার ছাঁকা জল নীচের টাঁকায় গিয়ে জমা হয় l দশ বারো জন সদস্যের একটি পরিবারের টাঁকা প্রায় পনেরো কুড়ি হাত গভীর এবং প্রায় ততটাই লম্বা চওড়া হয় l
এই টাঁকা কোনো ঘর, বৈঠকখানা অথবা উঠোনের নীচে থাকে l এটি পাকাপাকিভাবে ঢাকা থাকে l এক কোণে থাকে টাঁকার মুখ এবং তাতে কাঠের পরিষ্কার ঢাকনা লাগানো l এই জলেই সারা বছর খাওয়া ও রান্নার কাজ চলে l পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে ছাতে কেউ জুতো বা চটি পরে ওঠে না l গরমকালে ঘরের লোকজন অবশ্যই ছাতে শোয়া কিন্তু অবোধ শিশুদের এমন একটা জায়গায় শোয়ানো হয়, যে অংশটা টাঁকার সঙ্গে যুক্ত নয় l কেননা তারা রাত্রে বিছানা ভিজিয়ে ফেলতে পারে আর তাতে ছাদের পরিচ্ছন্নতা নষ্ট হবে l
প্রাথমিক সাবধানতা এটাই যে ছাত, নালা ও তার সঙ্গে যুক্ত টাঁকা যেন সম্পূর্ণ পরিষ্কার থাকে l তবুও কয়েক বছর অন্তর গরমের দিনে অর্থাত্ বর্ষার ঠিক আগে যখন টাঁকায় সব থেকে জল কম, তখন ভেতরে ঢুকে সেটি ধোয়া মোছা করা হয় l ভেতরে নামার জন্য ছোট ছোট সিঁড়ি এবং মেঝেতে সেইরকমই কড়াইয়ের মতো ঢালু খামাড়িয়ো থাকে, যাতে ভেতরে চলে যাওয়া ময়লা সহজে সংগ্রহ করা যায় l কোথাও কোথাও ছাত ছাড়াও ঘরের সামনের বড় উঠোনের সঙ্গে টাঁকার সংযোগ থাকে l তখন এর জল সংগ্রহের ক্ষমতা দ্বিগুণ হয়ে যায় l যদিও এসব টাঁকা ব্যক্তিগত, তবু ব্যবহারিক দৃষ্টিতে দেখলে পুরো পাড়াই এর সামনে জড়ো হয় l ব্যক্তি নৈর্ব্যক্তিকে মিশে যায় l
পাড়া, গ্রাম অথবা শহর ছাড়াও সুদূর নির্জনেও টাঁকা তৈরি হয় l নির্মাতারা নিজেদের জন্য নয়, সমাজের জন্যই করেন এ কাজ l প্রভূত্ব বিসর্জন দেওয়ার এর চেয়ে বড় উদাহরণ আর কোথায় আছে? এ ধরনের টাঁকাগুলো বিশেষ করে বাগাল ও পশুপালক ছেলেদের কাজে লাগে l সকালে জলভর্তি কুপড়ি ( মাটির চ্যাপ্টা কুজোঁ ) নিয়ে বেরিয়ে পড়ে যে রাখাল, দুপুর পর্যন্ত তার কুপড়ি খালি হয়ে যায় l তখন কাছে পিঠেই সে পেয়ে যায় এরকম একটা টাঁকা l প্রতিটি টাঁকায় দড়িতে বাঁধা একটি বালতি, নিদেনপক্ষে একটা টিনের কৌটো থাকে l
সীমাহীন বালুকাময় এলাকা, সেখানেও যদি কিছুটা পাথুরে বা কাঁকুরে মাটি পাওয়া যায় তাহলে সেখানেও টাঁকা তৈরি করা হয় l এক্ষেত্রে জলের পরিমাণ নয়, জস সংগ্রহ করতে পারাটাই গুরুত্বের বিষয়l বালির টিলার মাঝে ছোট ছোট জায়গা দেখা যায়, যেখানে অল্প হলেও বর্ষার জল জমে থাকে l এগুলোকে ‘চররো’ বলে l চররো-তে জমে থাকা জলও টাঁকায় ভরে নেওয়া হয় l এই রকম টাঁকার পাশে পাশে আল দিয়েও জল সংগ্রহ কিছুটা বাড়িয়ে নেওয়া হয় l
আধুনিক হিসেব অনুযায়ী, অতি ছোট কুণ্ডি বা টাঁকাতেও প্রায় দশ হাজার লিটার ও মাঝারিগুলোতে পঞ্চাশ হাজার লিটার জল জমা করা সম্ভব l বড় আকারের টাঁকাগুলি হল লাখপতি l এক লক্ষ, দু লক্ষ লিটার জল এতে ধরা থাকে l অবশ্য সবচেয়ে বড় টাঁকা কে কোটিপতিই বলুন l এতে ষাট লক্ষ গ্যালন অর্থাত্ প্রায় তিন কোটি লিটার জল ধরে l আজ থেকে প্রায় সাড়ে তিনশো বছর আগে জয়পুরের কাছে জয়গড় দুর্গে এটি তৈরি হয়েছিল l একশো পঞ্চাশ হাত লম্বা এবং চওড়া ও চল্লিশ হাত গভীর এই বিশাল টাঁকাটির প্রশস্ত ছাত ভেতরে জলে ডুবে থাকা একাশিটি থামের ওপর দাঁড়িয়ে রয়েছে l এর ভেতরে আলো হাওয়া ঢোকার জন্য চারপাশে রয়েছে জানালার ব্যবস্থা l ফলে জল সারা বছর টাটকা এবং পরিষ্কার থাকে l ভেতরে ঢোকার জন্য টাঁকার দুই প্রান্তে দুটো দরজা l এদের একটা গলি দিয়ে পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে এবং দুদিক থেকেই নীচে জলের কাছে যাওয়ার জন্য রয়েছে সিঁড়ি l সিঁড়ি দিয়ে নেমে বাঁকে করে জল ওপরে তুলে আনা হয় l বাইরের জানালা থেকে কারো ছায়া যখন স্তম্ভের মাঝে দিয়ে গিয়ে জলের ওপর পড়ে, তখন বোঝা যায় যে জল কতটা নীলাভ l
এই নীল জল দুর্গ বা গড়ের আশপাশের পাহাড়ের ছোট ছোট নালা দিয়ে একটা বড় নালায় এসে পড়ে l রাস্তার মতো চওড়া এই পরিখা দুর্গের সুরক্ষা পুরোপুরি বজায় রেখেই গড়ের দেওয়ালের তলা দিয়ে ভেতরে পৌঁছেছে l
বর্ষার আগে নালাগুলো পরিষ্কার তো করা হয়ই, তাছাড়াও বর্ষার প্রথম জল টাঁকার ভেতর ঢোকানো হয় না l প্রধান টাঁকা ছাড়াও আরও দুটো টাঁকা আছে l একটা খোলা, অন্যটা বন্ধ l এদের সামনে এসে বড় নালার মুখে ফটক লাগানো হয়েছে l এই ফটক খোলা বা বন্ধ করা যায় l প্রথমে প্রধান টাঁকার দিকে বয়ে চলা নালার ফটক বন্ধ করে দিয়ে খোলা টাঁকার পথ উন্মুক্ত করা হয় l প্রথম দফার জল নালাগুলিকে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিয়ে খোলা টাঁকায় গিয়ে পড়ে l এর পর তার সঙ্গে সংলগ্ন বন্ধ টাঁকায় l এ দুটির জল কাজে লাগত পশুদের l জয়গড় ছিল পুরোদস্তুর এক দুর্গ এবং কোন এক সময় গোটা একটা সৈন্যবাহিনীই এখানে থাকাত l সেই ফৌজের হাতি, ঘোড়া, উট সকলের জন্য প্রতিদিন প্রচুর জল প্রয়োজন l এছাড়া অত বড় দুর্গ পরিষ্কার করার জলও নেওয়া হত ঐ দুটো টাঁকা থেকেই l যখন জল আসার সব রাস্তা, সব নালাগুলো ধুয়ে পরিষ্কার হয়ে গেল তখন প্রথম ফটক বন্ধ হত এবং প্রধান টাঁকার ফটক খুলে যেত l এই বিশাল টাঁকা তখন তিন কোটি লিটার জল ধারণ করার জন্য প্রস্তুত। এত বড় টাঁকা তৈরী করার পেছনে অবশ্য শুধু প্রয়োজন নয়, দুর্গের সুরক্ষার বিষয়টিও ছিল l শক্ররা যদি কখনো দুর্গ অবরোধ করে, তাহলে দীর্ঘ সময় যেন ভেতরে জলের অভাব না হয় l
রাজা গেছেন, তার ফৌজও আর নেই l এখন জয়পুর বেড়াতে আসে যেসব পর্যটক, তারা এখানে ঘুরতে আসে l খাড়া ঢাল বেয়ে উঠে যখন তারা ক্লান্ত হয়ে পড়ে তখন এই টাঁকার শীতল নির্মল জল তাদের ক্লান্তি দূর করে l
টাঁকা ও কুণ্ডিতে স্থির হয়ে থাকা জলও যে এত নির্মল হতে, পারে তা বোধহয় সারা দেশে বয়ে চলা বাগধারাও আন্দাজ করতে পারে না l
Path Alias
/articles/thaemae-thaakaa-jala-nairamala
Post By: Hindi