তিন কোটি গাঁ পানীয় জল পায় না


পশ্চিমবঙ্গে গ্রামাঞ্চলের প্রায় সাড়ে সাত কোটি ( 7, 50, 00, 000 ) মানুষের মধ্যে প্রায় 83 লক্ষ মানুষ পরিস্রুত পানীয় জল পান না। সরকারি রির্পোটে বলা হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গের গ্রামাঞ্চলে 1 লক্ষ 4 হাজার 826 টি ( 1, 04, 826 ) বাড়ি রয়েছে। তার বাসিন্দার সংখ্যা মোট 7 কোটি 44 লক্ষের ( 7, 44, 00, 000) কিছু বেশি। এর মধ্যে গ্রামাঞ্চলের 9 হাজার 982 টি ( 9, 982 ) বাড়ির 83 লক্ষের ( 83, 00, 000) কিছু বেশি বাসিন্দা ( 11.22 শতাংশ ) পরিস্রুত পানীয় জল পান না বলেই রির্পোটে উল্লেখ করা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের গ্রামাঞ্চলের প্রায় 11.22 শতাংশ মানুষ ঠিকমতো পরিস্রুত পানীয় জল পান না। লোকসভায় লিখিতভাবে এই রির্পোট গত 28 এপ্রিল 16 দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। এখানে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, পশ্চিমবঙ্গ-সহ দেশের বেশ কয়েকটি রাজ্যে গ্রামাঞ্চলের মানুষ পরিস্রুত পানীয় জল পান না বলে ওই সরকারি রির্পোটে যেমন উল্লেখ করা হয়েছে, তেমনই ওই সরকারি রির্পোটে এটাও উল্লেখ করা হয়েছে যে গুজরাতের গ্রামাঞ্চলের প্রত্যেকে পরিস্রুত পানীয় জল পেয়ে থাকেন। 2016 সালের 31 মার্চ পর্যন্ত পাওয়া তথ্যের ওপর ভিত্তি করে ওই রির্পোট পেশ করেছে কেন্দ্র।

এক লিখিত প্রশ্নের উত্তরে কেন্দ্র জানিয়েছে - পরিস্রুত পানীয় জল না পাওয়ার ক্ষেত্রে সারা বিশ্বে ভারতের স্থান একেবারে শীর্ষে রয়েছে। তবে একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর ব্যাখ্যা, জনসংখ্যার শতাংশের হিসাবে ধরলে সারা বিশ্বে অবশ্য ভারত প্রথম দশে স্থান পাবে না। রিপোর্টে উল্লেখ আছে, সারা দেশের গ্রামাঞ্চলের প্রায় 90 কোটি বাসিন্দার মধ্যে প্রায় সাড়ে তিন কোটি ( 3, 50, 00, 000 ) মানুষই পরিস্রুত পানীয় জল পান না। শতাংশের হিসাবে করলে য়ার পরিমাণ দাঁড়ায় 3.64।

এক প্রশ্নের উত্তরে কেন্দ্রের পানীয় জল এবং শৌচালয় বিষয়ক মন্ত্রী রামকৃষ্ণ পাল যাদব লিখিতভাবে জানিয়েছেন - পশ্চিমবঙ্গে গ্রামাঞ্চলের প্রায় সাড়ে সাত কোটি ( 7, 50, 00, 000 ) মানুষের মধ্যে প্রায় 83 লক্ষ মানুষ পরিস্রুত পানীয় জল পান না। সরকারি রির্পোটে বলা হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গের গ্রামাঞ্চলে 1 লক্ষ 4 হাজার 826 টি ( 1, 04, 826 ) বাড়ি রয়েছে। তার বাসিন্দার সংখ্যা মোট 7 কোটি 44 লক্ষের ( 7, 44, 00, 000) কিছু বেশি। এর মধ্যে গ্রামাঞ্চলের 9 হাজার 982 টি ( 9, 982 ) বাড়ির 83 লক্ষের ( 83, 00, 000) কিছু বেশি বাসিন্দা (11.22 শতাংশ ) পরিস্রুত পানীয় জল পান না বলেই রির্পোটে উল্লেখ করা হয়েছে।

পানীয় জলের সংকট পঞ্চায়েতে


দক্ষিণ 24 পরগণা জেলা মহেশতলার মধ্যে আশুতি -1 গ্রাম পঞ্চায়েত। গ্রামীণ এলাকা হলেও প্রচুর জনবসতি। এক তলা ও দো -তলা বাড়ির সংখ্যা এখানে নেহাত কম নয়। সব মিলিয়ে 15 হাজার ( 15, 000) মানুষ ওই পঞ্চায়েত এলাকায় বসবাস করেন। এর উত্তর দিকে গা ঘেঁষে মহেশতলা পুরসভার 23 নং ওয়ার্ড। দক্ষিণ দিকে বিবিরহাট। মহেশতলা পুরসভা এলাকার মানুষ অবশ্য গার্ডেন রিচের জল পান। অন্য দিকে বিবিরহাটের মানুষ নোদাখালির রায়পুরের আর্সেনিকমুক্ত পানীয় জল পেয়ে থাকেন। কিন্তু মহেশতলা ও বিবিরহাটের মাঝখানে আশুতি -1 গ্রাম পঞ্চায়েতের অবস্থান হলেও এখানকার মানুষ সেই পানীয় জলের সুবিধা পায় না। এ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে এলাকার মানুষের যথেষ্ট ক্ষোভ বিক্ষোভ রয়েছে।

মহেশতলা থানার মধ্যেই পড়ে আশুতি -1 গ্রাম পঞ্চায়েত। কিন্তু বিষ্ণুপুর বিধানসভার মধ্যে এই অংশকে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিধানসভা নির্বাচনের সময় শাসক দলের প্রার্থী থেকে অনুগামীরা সকলেই বলেছিল, ভোট মিটে গেলে পানীয় জলের সমস্যার সমাধানে বিধায়ক নজর দিবেন, এগুবেন। কিন্তু সে উদ্যোগ এখনও দেখা যায়নি। পঞ্চায়েত প্রধানে কথায় জানা যায়, 84 টির বেশি পানীয় জলের টিউব ওয়েল বসানো হয়েছে। অবশ্য এরমধ্যে অঙ্গনওয়াড়ি স্কুলও রয়েছে। তবে তারমধ্যে বেশ কিছু জায়গা থেকে জল উঠেছে না বলে জানতে পারা যাচ্ছে। প্রধান বলেন - বিকল্প কোনো ব্যবস্থা করার মত ক্ষমতা পঞ্চায়েতের হাতে নেই। সরকারকে এটা নিয়ে ভাবতে হবে।

ভূ-গর্ভস্থ জল স্তর নেমে যাওয়ায় পানীয় জলের ভয়াবহ সমস্যা তৈরি হয়েছে মহেশতলা পুরসভা ঘেঁষা আশুতি, খানবেড়িয়া, গন্যে গঙ্গাধরপুর, চকচট্টা জুড়ে। ফলে ওই এলাকায় সরকারিভাবে কোথাও এক বছর, কোথাও ছ- মাস আগে হাজার হাজার টাকা খরচ করে যেসব নলকূপ বসানো হয়েছিল, তাতে এখন আর জল উঠছে না। মাথায় হাত এলাকার বাসিন্দাদের, কি করবে ভেবে পাচ্ছ না। বহু মানুষকেই জল কিনে খেতে হচ্ছে। ভুক্তভোগী মানুষের অভিযোগ –পানীয় জলের সঙ্কটের বিষয়টি পঞ্চায়েত থেকে শুরু করে প্রশাসনের উপরতলা পর্যন্ত সকলেরই নজরে আনা হয়েছে। সেখান থেকে মিস্ত্রিও পাঠানো হয়েছ। মিস্ত্রি এসে দেখার পর জানিয়েছে - জলস্তর নেমে গিয়েছে। এ কারণে নলকূপগুলি থেকে জল উঠছে না। কেউ কেউ বলেছেন, সম্প্রতি ভূমিকম্পের জেরে জলস্তর সাংঘাতিকভাবে নেমে যাওয়াতে এই পরিস্থিতি।

শহর ঘেঁষা দুই পঞ্চায়েত এলাকায় পানীয় জলের সংকট তীব্র


দক্ষিণ 24 পরগণা জেলা কলকাতা পুরসভার গা লাগোয়া সোনারপুরের খেয়াদহ - 1 এবং খেয়াদহ - 2 গ্রাম পঞ্চায়েত। সেখানে পানীয় জলের সমস্যায় জেরবার এলাকার প্রায় 40 হাজার মানুষ। বাম আমলে নোদাখালি থেকে আর্সেনিকমুক্ত পানীয় জল দেওয়ার জন্য চেষ্টা করা হয়, কিন্তু পরিকল্পনার অভাব ছিল তাই অপরিকল্পিতভাবে পাইপ ও জলাধার তৈরি হলেও তার সুবিধা মানুষ পুরোপুরি পায়নি। বরং পাইপ ফেটে নোংরা জল ঢুকে পানের অযোগ্য হয়ে যাচ্ছে। বিকল্প হিসাবে অগভীর নলকূপ বসিয়ে জল দেওয়ার উদ্যোগ নিলেও নোনা স্বাদের জন্য সেই জল খাওয়ার অযোগ্য হয়ে গিয়েছে। তাই বাধ্য হয়ে বেশি পয়সা দিয়ে বাইরে থেকে জল কিনে খেতে হচ্ছে গ্রামের মানুষকে। এ নিয়ে এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে যথেষ্ট অসন্তোষ রয়েছে।

দক্ষিণ 24 পরগনা জেলায় একাধিক ব্লক আর্সেনিক প্রবণ। তারমধ্যে সোনারপুর ব্লক রয়েছে। সরকারিভাবে সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে খেয়াদহ -1 এবং খেয়াদহ - 2 দুটি পঞ্চায়েত জলস্তরে আর্সেনিক মাত্রা সহনীয় ক্ষমতার বাইরে রয়েছে। এই সব কারণে বামফ্রণ্ট সরকারের সময় সোনারপুরসহ একাধিক ব্লকে গঙ্গার জল পরিশোধন করে নোদাখালি থেকে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছিল। সোনারপুর পঞ্চায়েত সমিতির এক পদাধিকারী বলেন, নোদাখালির জল আনার জন্য এই তল্লাটে অ্যাসবেস্টাসের পাইপ বসানো হয়েছিল। শুধু তাই নয়, খেয়াদহ - 1 পঞ্চায়েত মৌলীহাটি মোড়ে ওভারহেড জলাধারও তৈরি করা হয়। প্রথম দিকে নোদাখালির জল পাইপ লাইন দিয়ে ওই ওভারহেড জলাধারে আসত। তারপর তা এলাকায় সরবরাহ করা হত। পরবর্তী সময়ে অ্যাসবেস্টাসের পাইপ হওয়ার জন্য একটু চাপ লাগলেই তা ফেটে যেত। ফলে জলের চাপ গেল একেবারে কমে। ধীরে ধীরে নোদাখালি থেকে যতটা জল আসার কথা ছিল, তা কমিয়ে দেওয়া হল। পাইপ ফেটে গিয়ে সেখানে নোংরা জল মিশে যাওয়াতে নতুন করে নতুন বিপদ তৈরি হল। জলবাহিত রোগ শুরু হল সমস্ত এলাকা জুড়ে। তা এখনও অব্যাহত। মাঝে মধ্যে খেয়াদহ এলাকায় কোথাও না কোথাও পেটের রোগ হচ্ছে।

গোপালপুর কলম সোসাইটি পরিচালিত পাক্ষিক সংবাদপত্র ‘দুর্বার কলম’, ‘জল’ উত্সব সংখ্যা 2016
Source: Published at Gopalpur, Sarkarpool, South 24 Parganas, Pin -700143.

Path Alias

/articles/taina-kaotai-gaan-paanaiya-jala-paaya-naa

Post By: Hindi
×