সন্তানদের বাঁচাতে কেনা জলই ভরসা, সংসার টানতে সঙ্গীন দশা মা-বাবার


আর্সেনিক কবলিত 80শতাংশ জমিতেই ধান চাষ হয়ে থাকে। মাটির রস এবং সেচের জন্য ভূগর্ভস্থ জল, এই দুই থেকেই আর্সেনিক প্রবেশ করে থাকে। শোষিত আর্সেনিক জমা হয় গাছের কাণ্ড, পাতা ও শস্যদানায়। শুধু তাই নয়, ধান ঝেড়ে নেওয়ার পর যে খড় গবাদি পশুর খাদ্য হিসাবে ব্যবহার হচ্ছে, সেখানেও আর্সেনিকের উপস্থিতি টের পাওয়া যাচ্ছে। জেলায় আর্সেনিকের প্রভাব নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করা অধ্যাপক অভিজিত দাস যেমন বলেছেন - বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা থেকে দেখা যাচ্ছে ভূগর্ভস্থ যে জলের সাহায্যে চাষ হচ্ছে, তার ফলে ফসলের মধ্যেও আর্সেনিক ঢুকে পড়ছে। বিষ ও বঙ্গ – উত্সবের দিনগুলোতেও নদিয়ার হোগলবেড়িয়া পঞ্চায়েতের যাত্রাপুর দুয়ার পুজো এবারও হয়েছে। এখানকার বাসিন্দাদের কাছে তো বটেই, আশেপাশের বিস্তৃর্ণ এলাকার মানুষের বিশ্বাস, এই দুর্গা নাকি খুব জাগ্রত। তবু মন খারাপের কারণও আছে বিস্তর। জাগ্রত দেবীর আশীর্বাদেও যে তাঁদের এতদিনকার অভিশাপ কাটছে না। প্রতি বছর পুজোর সময় দূর-দূরান্ত থেকে মানুষরা ভিড় করেন হোগলবেড়িয়ায়। কিন্তু এখান থেকে মাত্র দু কিলোমিটার দূরে যাত্রাপুরে পা দেন না অতিথিরা। পাছে সেই বিষ জল পান করতে হয় তাঁদেরও। কয়েক ঘণ্টার জন্য যাত্রাপুরের বাড়িতে আত্মীয়স্বজনরা এলেও, সঙ্গে জলের বোতল ছাড়া ঢোকেন না কেউ। পূজোর আনন্দের মধ্যে ভুলক্রমে হাতে ওই আর্সেনিকের বিষ পরিবারের কারও শরীরে থাবা না বসায়, সেই ভয়ে কার্যত যাত্রাপুরের কল্পনা, সূচিত্রাদের বাড়ির ছোঁয়াচ বাঁচিয়েই চলেন অতিথিরা।

অতিথিরা তো আসবেন কয়েক ঘণ্টার জন্য। কিন্তু যাঁদের দিনরাত্রি সবটাই কাটে যাত্রাপুরেই, তাঁদের ভবিষ্যত কী ? বা এখান থেকে ঘণ্টা কয়েক দূরত্বে বসিরহাটের মেরুদণ্ডীর হরিদাস বালা, নিয়াই রায়দের। সরকারি কল বসেছে। বাড়ি বাড়ি জলের সংযোগও গিয়েছে। তবু সেই জলে হাত ছোঁয়া মানা। বাড়ির লোকজনের প্রাণ বাঁচাতে কেনা জলই ভরসা তাঁদের। মেরুদণ্ডী পশ্চিমপাড়ার বাসিন্দা হরিদাস বালা যেমন বাবা, দাদা, বৌদি সবাইকেই খুইয়েছেন আর্সেনিকের কবলে। তাই ছেলে, মেয়ে, নাতি, নাতনিদের জন্য প্রতি মাসে জল কেনেন হরিদাস। তাঁর কথায়, মাসে হাজার চারেক টাকা রোজকার। তার মধ্যে প্রতিমাসে শুধু জলের জন্যই অন্তত হাজার দেড়েক টাকা খরচা হয়, জল কিনতে । বাচ্চাদের তো খাওয়া তো বটেই, স্নান, মুখ ধোওয়াতেও কেনা জলই ব্যবহার করি।

মেরুদণ্ডীতেই একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার উদ্যোগে পানীয় জল সরবরাহের জন্য পাম্প বসানো হয়েছিল। সেই পাম্পও বিকল বেশ কিছুদিন। বন্ধ প্রকল্পটি দেখিয়ে স্থানীয় বাসিন্দা সুজয় সর্দার বলছিলেন - মাসে অন্তত 40 লিটার জল কিনতে হয়। সেই সুযোগে দু তিনটি সংস্থা জল পরিশুদ্ধ করে সরবরাহের কাজ শুরু করেছে। মাসে হাজার দুয়েক টাকার খরচ। প্রবীণ শিক্ষক নিমাইয়ের আশঙ্কা, অনেকগুলো জল সরবরাহকারী সংস্থা গজিয়ে উঠেছে ঠিকই। কিন্তু সে জলেও যে বিষ নেই তা কে বলবে ?

গাইঘাটার ভীম বিশ্বাস বা জগবন্ধু মণ্ডলদের অবশ্য সে উপায় নেই। বাধ্য হয়ে টিউবওয়েলের জলই খাচ্ছেন তাঁরা। উত্তর 24 পরগণার বসিরহাটে, নদিয়ার করিমপুরের মতোই আর এক আর্সেনিক উপদ্রুত জেলা মুর্শিদাবাদের জলঙ্গি পঞ্চায়েত সভাপতি সাইফুল ইসলাম মোল্লা বলছেন - আমাদের এখানেও মানুষ জল কিনে খেতে বাধ্য হচ্ছেন। তবে সেই সংখ্যাটা অনেক কম। সরকারি স্তরে আর্সেনিক আক্রান্তদের সংখ্যা যে নতুন করে খুব একটা বাড়েনি, তার অন্যতম বড় কারণ হিসাবেও এই সচেতনতাই দেখছেন প্রশাসনিক আধিকারিকরা। তাঁদের বক্তব্য, যাঁরা আক্রান্ত তাঁদের তো আর কিছু করার নেই। কিন্তু কেউই তো আর তাঁদের পরবর্তী প্রজন্মকে এভাবে তিল তিল করে মরতে দেখতে পারেন না। তাই জলের জন্য খরচ করতে বাধ্য তাঁরা।

বিশেষভাবে বলেছেন - শুধু পানীয় জল নয়, খাদ্য শৃঙ্খলের মধ্যেও জায়গা করে নিচ্ছে আর্সেনিক। চাল থেকে সবজি, এমনকি, পশুখাদ্যের মধ্যও উদ্বেগজনক মাত্রায় আর্সেনিকের উপস্থিতি মিলেছে। মুর্শিদাবাদের 26টি ব্লকের মধ্যে 22টিই আর্সেনিক কবলিত।

জেলা কৃষি দপ্তর সূত্রের খবর - আর্সেনিক কবলিত 80শতাংশ জমিতেই ধান চাষ হয়ে থাকে। মাটির রস এবং সেচের জন্য ভূগর্ভস্থ জল, এই দুই থেকেই আর্সেনিক প্রবেশ করে থাকে। শোষিত আর্সেনিক জমা হয় গাছের কাণ্ড, পাতা ও শস্যদানায়। শুধু তাই নয়, ধান ঝেড়ে নেওয়ার পর যে খড় গবাদি পশুর খাদ্য হিসাবে ব্যবহার হচ্ছে, সেখানেও আর্সেনিকের উপস্থিতি টের পাওয়া যাচ্ছে। জেলায় আর্সেনিকের প্রভাব নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করা অধ্যাপক অভিজিত দাস যেমন বলেছেন - বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা থেকে দেখা যাচ্ছে ভূগর্ভস্থ যে জলের সাহায্যে চাষ হচ্ছে, তার ফলে ফসলের মধ্যেও আর্সেনিক ঢুকে পড়ছে। জেলার কৃষি আধিকারিক দীনেশ পালের কথায় - জেলায় উত্পাদিত ফসলের মধ্যে কী পরিমাণ আর্সেনিক রয়েছে, তা নিয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই। বিষয়টা কৃষিদপ্তরকেও জানানো হয়েছে।

জলাভূমি ভরাট হচ্ছে জন প্রতিনিধিদের মদতেই…
সৌজন্যে - জনস্বাস্থ্য বার্তা


পয়লা আষাঢ় মানে জুন মাসের 16 বা 17 তারিখ। দিনটি এই রাজ্যে পালিত হয় জলাভূমি দিবস হিসাবে। স্বাধীনতার পর দেশে উন্নয়নের জোয়ার এসেছে। প্রতি পাঁচ বছর অন্তর অন্তর পাল্টে যায় উন্নয়নের গতিমুখ। পুরানো জন প্রতিনিধিদের ভিত শক্ত। তাই জলা ভরাট বা পুকুর ভরাট করার মদত দিতে ততটা নাটক করতে হয় না। সরাসরিই বলতে থাকেন নোংরা দুর্গন্ধ হচ্ছে কী করবে তাই বুজিয়ে দিচ্ছে। জন প্রতিনিধির ল্যাঙ্গোট সঙ্গে দু চারজন। সাবধানেই কথা বলতে হয়। জনসাধারণ চোখের সামনে পুকুর ভরাট দেখলে চোখ বন্ধ রেখে কেউ ব্যস্ততায় চলে যান কেউ আবার কেমন করে ভরাট হচ্ছে তারই দৃশ্যগুলো দেখে মজা পান। গাছ কাটা আর পুকুর ভরাট যতই হোক তাদের কোনো হেলদোল নেই।

জলাভূমির উপর প্রমোটারদের থাবা বেশি করে ঘটেছে ঐ জনপ্রতিনিধিদেরই পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষ মদতে। কখনও কী এমন দাবী জনসাধারণের মধ্য থেকে উঠেছে সংশ্লিষ্ট জনপ্রতিনিধি মশাই তাঁর পাঁচ বছরের শাসনকালে তাঁরই এলাকায় কতগুলো পুকুর ভরাট কিংবা ফ্ল্যাটের অনুমোদন করিয়ে দিয়েছেন তার হিসাব চাইছে জনসাধারণ ? এটা কোনোও নির্দিষ্ট একটি সরকারের আমলের বিষয় নয় - আগের বাম সরকার থেকে এখনকার তৃণমূল সরকারের আমলে একই ভাবে জলাভূমি ভরাট চলছে। পূর্ব-কলকাতা নাগরিক মঞ্চের সম্পাদক নব দত্ত জানিয়েছেন ঐতিহ্যমণ্ডিত পূর্ব কলকাতা জলাভূমির উপর দখলের শত শত ঘটনা ঘটেছে। 2014 পর্যন্ত এই এলাকায় বেআইনি দখলের কারণে 300-র বেশি এফ. আই. আর. হয়েছে বিভিন্ন থানায়। এই সরকার আসার পর অন্তত 150টি অভিযোগ দায়ের হয়েছে। এই এফ. আই. আর.গুলি কোন সাধারণ নাগরিক দায়ের করেনি, করেছে ইস্ট ক্যালকাটা ওয়েটল্যাণ্ড ম্যানেজমেণ্ট অথরিটি।

এই অথিরিটি রাজ্য সরকারের একটি সংস্থা যার চেয়ারম্যান হলেন রাজ্যের মুখ্যসচিব। অর্থাত মুখ্যসচিবের সংস্থার পুলিশে অভিযোগ জানাচ্ছে কিন্তু একটি ক্ষেত্রেও পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। সেণ্টার ফর সায়েন্স অ্যান্ড এনভায়নমেণ্ট ( সি. এস. ই. ) -এর ডাইরেক্টর সুনীতা নারায়ণ বলেছেন এইভাবে জলাভূমি হাসিল করে প্রমোটারির ফলে কলকাতার মৃত্যু ডেকে আনা হচ্ছে। জলাভূমির কাজ মানুষের দেহে কিডনির মতো। সি. এস. ই. -র সপ্তম জাতীয় রির্পোট বলছে কলকাতার জলাগুলি দিনে 81 কোটি লিটার নিকাশির জল শোধন করে পুরসভার অন্তত 400 কোটি টাকা বাঁচায়। আর এই জলায় মাছ ধরে সবজি চাষ করে বেঁচে আছেন 40 হাজার পরিবার। সেখান থেকে পাওয়া যায় 150 টন সবজি এবং 8000 টন মাছ। এই জলাভূমিগুলি প্রতিদিন যে পরিমানে ময়লা পরিশোধন করে তা বন্ধ হলে কলকাতা শহরটি আর বাসযোগ্য থাকবে না। শহরে রোজ তৈরি হয় 112 কোটি লিটার বর্জ্য যা পরিশোধিত হয় চারটি পরিশোধন ট্রিটমেণ্ট প্ল্যাণ্টে। এর পরিশোধন ক্ষমতা 31.50 লিটারের কাছাকাছি হলেও দিনে 15 লিটারও তারা আর পরিশোধন করতে পারে না।

বাকি দায়িত্ব জলাগুলির। যেগুলি ভারতে খড়্গহস্ত রাজনৈতিক মদতপুষ্ট প্রমোটার লবি এখন যাদের আরেক নাম সিন্ডিকেট। এদেরই থাবায় বিক্রমগড় ঝিল ধুঁকছে, ঝকঝক করছে সাউথ সিটি। বাম আমলে যিনি সাউথ সিটির বিরুদ্ধে বিপ্লবী আন্দোলন করেন তিনি এখন মন্ত্রী জনপ্রতিনিধি তাই চুপ ! সরকার নিজেই জলা বুজিয়ে ইকো - ট্যুরিজম পার্ক করছে মেট্রো রেলের লাইন হচ্ছে। মহেশতলা আর কলকাতার সীমানায় জিনজিরা বাজারের পাশে রেল লাইনের ধারে বিশাল ঝিল কেমন করে যেন বুঝিয়ে বাজারের সবজি বোজাই লরিগুলো ঢুকছে মাল খালাস হচ্ছে। ব্রেসব্রিজ স্টেশনের পাশ থেকে শুরু হয়ে সন্তোষপুরের রেল গেট পর্যন্ত এই বিশাল ঝিলটি বোঝানোর পেছনে যারই মাতলব থাকুক দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে কত জনপ্রতিনিধির চোখের সামনে একটি প্রাণবন্ত ঝিল বুজে যাচ্ছে কেউ কী জানেন না ? আসলে এই কর্মকান্ডের রহস্য লুকানো রয়েছে বিশাল লোভ নামক দৈত্যের হাতে। তুমি আমাকে দেখলে আমি তোমাকে দেখবই।

Source: Published at Gopalpur, Sarkarpool, South 24 Parganas, Pin -700143.

Path Alias

/articles/sanataanadaera-baancaatae-kaenaa-jalai-bharasaa-samsaara-taanatae-sanagaina-dasaa-maa

Post By: Hindi
×