জল নিয়ে সবচেয়ে বড় গল্প হচ্ছে বোতলে জলের গল্প। ভারতে পানীয় জলের সমস্যা করপোরেট ব্যবসায়ীদের কাছে ব্যবসায়ের এক বিরাট সুযোগ এনে দিয়েছে। ১৯৯১ সাল যখন অর্থনৈতিক সংস্কার শুরু হয় তখন পানীয় জলের ব্যবসায়ে এই সুযোগ আসেনি। Bisleri কোম্পানী বোতলে জলের ব্যবসা প্রথম শুরু করার চেষ্টা করে ১৯৬৭ সালে কিন্তু তা সফল হয়নি। ১৯৯৪ সালে আবার তারা বোতলে জলের প্রোজেক্ট শুরু করে। তাদের খুব চটকদারী স্লোগান দিয়ে, “Bisleri very very extraordinary” এই বিজ্ঞাপন ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে বোতলে জলের ব্যবসা বিরাট আকার ধারণ করে।
নগরায়ণ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শহরাঞ্চল ও গ্রামে জলের যোগান এক অতি বড় সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে। শহরের চাহিদা গ্রামীন অঞ্চলে জলের সমস্যার সৃষ্টি করছে। দিল্লীর কথা ধরা যাক। সারা ভারতের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মাথা পিছু জলের সরবরাহের বন্দোবস্থ আছে দিল্লীতে। National Capital Region (NCR)- এর প্ল্যানিং বোর্ডের হিসেব অনুসারে দিল্লীতে মাথা পিছু দৈনিক জল সরবরাহ করা হয় ৩৪০ লিটার। কিন্তু জলের বন্টন আশ্চর্য্য রকমভাবে অন্যায্য। NCR-এর তিন চতুর্থাংশ বাস করে বস্তিতে। তাদের অতি কষ্টে জল জোগাড় করতে বা কিনতে হয়। তাদের মাথা পিছু দিনে ৩০ থেকে ৯০ লিটারে সন্তুষ্ট থাকতে হয়। তার জন্যে দিনের প্রখর রোদে বহু সময় ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। অথচ রেস কোর্সে প্রধানমন্ত্রীর বাড়িতে ৭৩ হাজার লিটার জল সরবরাহ করা হয়। একজন মন্ত্রীর বাড়িতে ৩০ হাজার থেকে ৪৫ হাজার লিটার জল ব্যবহৃত হয়। একটি পাঁচ তারা হোটেলের একটি ঘরে দৈনিক হাজার লিটার জল লাগে।দিল্লীর জলের সমস্যা অপ্রতুল জল সরবরাহ নয়। দিল্লীতে জল সরবরাহ করতে তার সংলগ্ন রাজ্যগুলিতে জল সংকটে ভুগতে হয়। দিল্লীতে যেখানে মাথা পিছু দৈনিক ৩৪০ লিটার জল সরবরাহ করা হয় সেখানে সিংগাপুরে করা হয় ১৬২ লিটার, হংকং-এ ৭২ লিটার, জার্মানির মিউনিখে ১৩০ লিটার এবং কোপেনহাগেনে ১২৫ লিটার। ঐসব শহরে জল সরবরাহে নিয়ন্ত্রণ আছে। সরকারী হিসেবে ৪০ শতাংশ জল যা দিল্লীতে সরবরাহ করা হয় তা অপচয় হয়। তা সত্ত্বেও সরকারের তরফ থেকে কোন রকম ব্যবস্থা নেই যাতে যারা অপর্যাপ্ত জল ব্যবহার করে তাদের সংযত করার বা তাদের ওপর জল ব্যবহারের ওপর শুল্ক বসান।
বেশ কিছুদিন হলো সরকারের উপর চাপ সৃ্ষ্টি করা হচ্ছে দিল্লীর জল সরবরাহ ব্যবস্থাকে ব্যবসায়ীর হাতে তুলে দেওয়া হোক। ২০০৭ সালে পরিবর্তন নামে এক এন জি ও-এর অরবিন্দ কেজরিওয়াল (একজন আর টি জি একটিভিস্ট) (বর্তমানে দিল্লীর মুখ্যমন্ত্রী) ওয়াল্ড ব্যঙ্ক (W.B)-এর people’s tribunal-এ তার সাক্ষে বলেন যে W.B-ই চাপ সৃষ্টি করছে জল সরবরাহ ব্যবস্থাকে ব্যবসায়ীদের হাতে তুলে দিতে। কিন্তু W.B জানায় যে দিল্লীর বোর্ড W.B-এর কাছে ধার পাওয়ার জন্য চুক্তিতে আসতে চায়। কেজরিওয়াল দেখান যে W.B কিভাবে চাপ সৃষ্টি করে সরকারের উপরে যাতে জল লরবরাহের চুক্তি price water house cooper-কে দেওয়া হয়। এইরকম চাপ সৃষ্টি করা W.B-এর মূল নীতির বিরুদ্ধে। Indian Institute of Management (IIM)- এর ৩৫ জন অধ্যাপক সরকারের কাছে তাদের প্রতিবাদ জানান। ২০০৪ সালের শেষে মিডিয়াতে এই ব্যাপারে খুবই সোরগোল ওঠে। এছাড়া সাধারণ মানুষের প্রতিবাদে এই জল ব্যবস্থা ব্যবসায়ীদের হাতে তুলে দেওয়ার পরিকল্পনা বাতিল হয়। যদি ব্যবসায়ীদের হাতে এই সরবরাহ ব্যবস্থা তুলে দেওয়া হতো তাহলে সাধারণ জনসাধারণকে নয় গুণ বেশি দাম দিতে হতো জলের জন্য। এর ফলে দিল্লীর বেশির ভাগ শহরবাসী জল পাওয়া থেকে বঞ্চিত হতো। – কারণ ঐ দামে জল কেনার পয়সা তাদের নেই। W.B চেয়েছিলো দিল্লীর ২১টি জল জোনকে ব্যবসায়ীদের হাতে তুলে দিতে। তারা প্রচুর লাভ করতে পারবে। ঐ পরিকল্পনা অনুসারে প্রতিটি জল জোনের জন্য যে consultant নিয়োগ করা হবে তাকে মাসে ২৫০০০ ডলার পারিশ্রমিক দিতে হবে।
২০০২ সালে যে National Water Policy জারি করা হয় তা জলের ব্যবসায়ীকরণের পক্ষপাতী ছিল। National Water resource council- এর একটি সভায় প্রধানমন্ত্রী বলেন- ‘The Policy should… recognize that the community is the rightful custodian of Water exclusive control of the Government Machinery… can not help us to make the paradigm shift to participative, essentially।ocal management of water resource… wherever, possible PPP’s should be encouraged in such a manner that we can attract private investment to the development and management of water resource.’ জল সরবরাহের ব্যপারে সরকারের এই যে দৃ্ষ্টিভঙ্গী তাতে বহুমাত্রিক করপোরেশন এবং বস্তুবাসীকে একই মাণদণ্ডে দেখা হয়। মনে হয় যেন ঐ ‘community’-এর মধ্যে বস্তিবাসীরাও ঐ participatory management –এর স্বপক্ষে।
তৃতীয় বিশ্বের যেখানে যেখানে শহরের জল সরবরাহ ব্যবস্থাকে তুলে দেওয়া হয়েছে- গরীব জনসাধারণ জল সরবরাহ ব্যবস্থার বাইরে চলে গেছে। কারণ তাদের অত দামে জল কেনার সামর্থ নেই। ব্যবসায়ীকরণের যে প্রধান যুক্তি দেওয়া হয় তা হচ্ছে যে শহরের জল সরবরাহের যে খরচ তা যাতে ওঠানো যায়। কিন্তু অন্য আরো গল্প আছে ব্যবসায়ীকরণের পেছনে। জল ব্যবসায়ী কোম্পানীর যারা শেয়ার হোল্ডার তাদের ভাগ চুকিয়ে দিতে হবে। কিন্তু এই জল সরবরাহের জন্য বড়ো বড়ো করপোরেশনের জন্য যে ঝুঁকি তা নিতে হয় করদাতাদেরকে এবং সরকারকে।
আশ্চর্যের ব্যপার যে আমেরিকাতে জল সরবরাহ ব্যবস্থা আছে তার দশ শতাংশ মাত্র ব্যবসায়ীরা যোগান দেয়। যুক্তি দেওয়া হয় যে ব্যবসায়ীরা পরিকাঠামের জন্য অর্থের যোগান দেবে। কিন্তু এই দাবী অলীক। বাস্তবত, কেম্পানীরা টাকা তোলে শেয়ার বেচে এবং তার সুদ এবং মূলধন তোলে জনসাধারণকে উচ্চ দামে জল বেচে। বহুজাতিক ব্যবসায়ীরা তৃতীয় বিশ্বে পুঁজি লগ্নি করতে চায় না জল ব্যবসায়ে তার ঝুঁকির জন্য। International Financial Institution (IFI)- ঐ সব কোম্পানীর মধ্য দিয়ে গরীব দেশগুলিতে তাদের টাকা লগ্নি করে। এইসব গরীব দেশ নানারকম সুযোগ সুবিধা দেয় এইসব ব্যবসায়ীদের। যেমন ডলারের মূল্যে লাভ নিশ্চিত, ঋণের ব্যপারে গ্যারান্টি, একটি নূনতম জলের চাহিদা ইত্যাদি। বেসরকারীকরণের পর ঘানা, আর্জেনটিনা এবং ফিলিপিনসে জলের দাম দু-তিনগুণ বেড়ে গেছে।
এমনকি যেসব যায়গায় জল সরবরাহ করার ব্যবস্থা বেসরকারীকরণ করা হয়নি সেখানেও জল সরবরাহ করা যে সরকারের দায়িত্ব সেখান থেকে সরকার সরে আসছে। এর ফলে, জল সরবরাহে ব্যাবসায়ীরা ঢুকে পড়ার সুযোগ পাচ্ছে। যেহেতু জলের যোগান কম তাই প্রয়োজন মেটাতে বেসরকারী যোগানদার সুযোগ পায়। রাষ্ট্র সঙ্ঘের তথ্য জানাচ্ছে যে ১৯৯৭ সালে বেসরকারী যোগানদাররা সরকারী জলের মূল্যের চেয়ে ৪০গুণ বেশি দাম নিয়েছে। দিল্লীতে সেই মূল্য কখনো কখনো ৫০০গুণ হয়েছে যখন আমরা দেখি যে ধনী ও মধ্যবিত্তের বাড়িতে পাইপে জল আসছে তখন জল সরবরাহের অসাম্যের অবস্থা আমরা বুঝতে পারি। মুম্বাইয়ে জল এখনও বেসরকারীকরণ হয়নি। সেখানে দিন মজুরদের রোজগারের ২০শতাংশ ব্যয় করতে হয় জল কিনতে। বস্তি উচ্ছেদ এই বঞ্চনাকে আরও তীব্র করেছে।গ্রাম অঞ্চলে জলের বেসরকারীকরণ এক অনন্য রূপ নিয়েছে। ১৯৯৮ সালে ছত্তিশগড়ে শেওনাথ (Sheonath) নদীর ২৩ কিমি Radius Water limited নামে একটি কোম্পানিকে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছিল। এর ফলে ঐ নদীর পাশে অবস্থিত ১৫টি গ্রামে চাষ ও অন্যান্য কাজে জলের যোগান বিপর্যস্ত হয়। বহু প্রতিবাদ ও আন্দোলনের ফলে ঐ নদী ব্যবসায়ীর হাত থেকে মুক্ত হয়। এরই মধ্যে Jindal Steel & Powerlimited-কে কুক্রুত (Kukrut) নদীর উপর বাঁধ নির্মাণ করার অনুমতি দেওয়া যায়। এর ফলে ঐ নদীর ধারে অবস্থিত দশটি গ্রামের জলের যোগান ব্যহত হয়। ঐ জিন্দাল গ্রুপ কেলু নদীর জলও ব্যবহার করতে থাকে যেন তা তার ব্যক্তিগত সম্পত্তি। ফলে শত শত গ্রামবাসীর চাষের জলের অভাব ঘটে। মহারাষ্ট্রে নীরা (Nira) নদীর ২০০কিমি ১০০ কোটি টাকায় বিক্রি করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু সাধারণ মানুষ এবং বিভিন্ন এন.জি.ও. প্রতিষ্ঠানের বিরোধিতার ফলে ২০০৯ সাল থেকে ঐ প্রস্তাব স্থগিত আছে।
জল নিয়ে সবচেয়ে বড় গল্প হচ্ছে বোতলে জলের গল্প। ভারতে পানীয় জলের সমস্যা করপোরেট ব্যবসায়ীদের কাছে ব্যবসায়ের এক বিরাট সুযোগ এনে দিয়েছে। ১৯৯১ সাল যখন অর্থনৈতিক সংস্কার শুরু হয় তখন পানীয় জলের ব্যবসায়ে এই সুযোগ আসেনি। Bisleri কোম্পানী বোতলে জলের ব্যবসা প্রথম শুরু করার চেষ্টা করে ১৯৬৭ সালে কিন্তু তা সফল হয়নি। ১৯৯৪ সালে আবার তারা বোতলে জলের প্রোজেক্ট শুরু করে। তাদের খুব চটকদারী স্লোগান দিয়ে, “Bislasri very very extraordinary” এই বিজ্ঞাপন ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে বোতলে জলের ব্যবসা বিরাট আকার ধারণ করে। সারা বিশ্বেই বোতলে জলের ব্যবসা খুবই নতুন। বিশ্বের পানীয়ের বাজারের ক্ষেত্রে বোতলের জলের ব্যবসার বাড় বাড়ন্ত বিরাট। এর পরিমান $10000 কোটি। এর ভাগ হচ্ছে পানীয়ের বাজারের ৩৮ শতাংশ। যেখানে সারা বিশ্বে বোতন জলের বাজার বাড়ছে বছরে ৪.৫% সেখানে ভারতে বেড়েছে অবিশ্বাস্যভাবে ২০ থেকে ৪০ শতাংশ। চার বছরে দ্বিগুণ হচ্ছে। যেখানে ১৯৯০ সালে ২০ লক্ষ পেটি বিক্রী হতো সেখানে ২০১০ সালে তা হলো ১৫ কোটি পেটি। প্রায় ৭৫ গুণ বৃদ্ধি। এখন ২০০ রকমের বোতলের জলের ব্রাণ্ড পাওয়া যায় এবং ভারতে ১৮০০ bottling plant তৈরী হয়েছে। পৃথিবীতে ভারতই হচ্ছে সবচেয়ে বেশি বর্দ্ধমান বোতলের জলের বাজার। ১৯৯৯ থেকে ২০০৪ সালের মধ্য চীনে বোতল বিক্রী দ্বিগুণ হয়েছে কিন্তু ভারতে হয়েছে তিনগুণ। এই যে বৃদ্ধি তার কারণ দুটি, ১. জলবাহিত রোগের বৃদ্ধি, দ্বিতীয় আক্রমনাত্মক বিজ্ঞাপন এবং সরকারের আবগারী শুল্ক হ্রাস।
ভারতে পাণীয় জলের সমস্যা গুরুতর। এই সমস্যার একটা কারণ হচ্ছে বোতলে জলের ব্যবসা। মাটির নীচে থেকে জল টেনে নেওয়ায় জলের স্তর নেমে গিয়েছে এবং দূষণ বেড়েছে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে। কোকা কোলা, পেপসি কোলার মতো soft drinks- এর কোম্পানী মাটির নীচে থেকে লক্ষ লক্ষ লিটার জল তুলে নিচ্ছে। ফলে মাটির নীচে পরিশ্রুত জল পাওয়া কঠিন হয়েছে। কেরালার প্লাচিমাদা, প্রদেশে মেহেদিগঞ্জ এবং সে স্থানের কালাডেরায় কোকা কোলার bottling plant-এর বিরুদ্ধে স্থানীয় গ্রামবাসী আন্দোলন করে। কোর্টের আদেশে প্লাচিমাদা-র bottling plant বন্ধ হয়ে যায়। কালা ডেরায় মাটির নীচে থেকে জল তোলার জন্য কোকা কোলা কোম্পানী সরকারকে ২০০০ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত বছরে মাত্র ৫০০০ টাকা করে দেয়। জলের দুষনের জন্য জলবাহিত রোগের বৃদ্ধিও ঘটে।
ভারতে এখনো মাথা পিছু বোতলের জলের ব্যবহার হচ্ছে বছরে মাত্র ৬ লিটার। যেখানে সারা পৃথিবীর গড় হচ্ছে ২৪ লিটার। ভারতে এই যে বোতলে জলের ব্যবহার তা হচ্ছে মোট পানীয় জল যা ব্যবহার করা হয় তার মাত্র ১ শতাংশ। তাই এতো bottling plant-এর বাড়বাড়ন্ত। কারণ বাজার বিরাট।
বোতলে জল বিক্রীতে লাভ হয় ২০ থেক ২০৫ শতাংশ। জল সংগ্রহের খরচ নামমাত্র। একটি ১০ টাকার বোতলের জল সংগ্রহের জন্য খরচ হয়, সব রকম খরচ নিয়ে মাত্র ২৫ পয়সা। বোতলে জলের জন্য প্রধান খরচ হয় প্যাকেজিং, মার্কেটিং এবং পরিবহনের জন্য। কর নিয়ে এক লিটারের একটি বোতলের খরচ হয় ৫ থেকে ৭ টাকার মধ্যে। সবথেকে আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে লোকেরা বোতলের জল কিনতে ১০ থেকে ১২ টাকা দিতে রাজি। এতে কোম্পানীর লাভ থাকে ৪০ থেকে ১৪০ শতাংশ। এই জল বিক্রীর জন্য কতরকমের বিজ্ঞাপন! বোতলের জল হচ্ছে, ‘purer’, ‘safer’, ‘sweeter’, ‘healthier’, ‘has more oxygen’, ‘wimalayan’, ‘mineral rich’, ‘sparkling’ ইত্যাদি। বিরাট লাভের আশা টেনে নিয়ে এসেছে বড় বড় ব্যবসায়ী খেলোয়াড়দের। পার্লের বিসলেরি হচ্ছে সবচেয়ে বড় খেলোয়াড়। এছাড়া আছে পেপসির Aquafina brand. Tata tea কিছুদিন আগে Mount Everest Brand চালু করেছে। কোকা কোলা বিক্রী করছে ‘kinley Brand’। বিভিন্ন কোম্পানীর কেনাবেচা চলছে। বোতলের জলের সবচেয়ে বড় খরচ হচ্ছে পরিবেশের ধ্বংসের খরচ। যেমন, মাটির নীচের জলের স্তরের নীচে নেমে যাওয়া, দূষণ এবং বর্জ্য সৃষ্টি। যদি এই খরচগুলি হিসেবে না নেওয়া হয় তাহলে বাজারি অর্থনীতিতে বোতলের জল ক্রমাগত বেশী বেশী করে উত্পাদিত হবে। এই যে পরিবেশের ধ্বসের খরচ তা যারা বোতলের জল কেনে ও বিক্রী করে কেউই দিতে চায় না। তারা জানতেও চায় না ঐ জলের সত্যিকারের খরচ কত। এই খরচের কোন হিসেব সরকার বা উত্পাদক কারো কাছেই নেই। বোতলের জলের সত্যিকারের খরচ জানতে গেলে আমাদের গ্রামীন মানুষদের কাছে যেতে হবে যারা ঐ পরিবেশের ধ্বসের জন্য ভোগে।
ঐসব bottling company এবং সরকার, যে ঐ company-দের লাইসেন্স দেয়, তারা জনসাধারণকে জানতে দেয় না ঐ সব কোম্পানী কি রকম energy footprint লাগায় বোতলে জল বিক্রী ব্যবসায়। জল মাটির নীচে থেকে তুলতে, প্রসেস করতে, বোতলজাত করতে, পরিবহণ করতে, ঠাণ্ডা করে বিক্রী করতে হলে জল সরবরাহ করার চেয়ে ২০০০ গুণ বেশী শক্তি খরচ করে। এই খরচের মধ্যে বোতল বর্জ্যকে সরাসরি শক্তি খরচ ধরা হয়নি। এক বোতল জল তৈরী করতে তিন থেকে সাত বোতল জলের প্রয়োজন হয়, সব সকম সত্যিকারের খরচ ধরলে কোন কোন হিসেবে বোতোলে জলের দাম পাইপে জল সরবরাহের খরচের চেয়ে ১০০০ গুণ বেশি। আমেরিকায় এক গ্যালন জলের দাম $10 যা পেট্রোলের দামের চেয়ে বেশি। পৃথিবীতে জলবায়ু পরিবর্তন এক বিপর্যয়ের সংকেত দিয়েছে। এই রকম পৃথিবীর অবস্থায় বোতলে জল ব্যবসা নতুন বিপদ ডেকে আনছে। আগেই বলা হয়েছে এই বোতলের জল শিল্প কিরকম শক্তি ব্যবহার করে আর শক্তি ব্যবহারের অর্থ জীবাশ্ম জ্বালানীর ব্যবহার। খনিজ তেলের সঞ্চয় খুব শীঘ্র শেষ হবে। আজ আবার এই মিলারেল জল বিদেশ থেকে আমদানী করা হচ্ছে কারণ ঐ জলে কীটনাশক ইত্যাদির পরিমান কম। এই পরিবহনেও শক্তির প্রয়োজন। অথচ মানুষের পানীয় জলের যোগান দেওয়ার অনেক সহজ উপায় আছে যাতে প্রচুর শক্তি খরচ করে বিদেশ থেকে জল আমদানী করতে হবে না বা মাটির নীচে থেকে জল টেনে নিয়ে বোতলের জল পান করতে হবে না। কিন্তু সেই গল্প অন্য গল্প।
Path Alias
/articles/jalaera-khabara
Post By: Hindi