গোমুখ থেকে গঙ্গোত্রী পর্যন্ত অংশটিকে বলা হয়ে থাকে তুষার স্রোতের নদী যা ভূউষ্ণায়ণের দরুণ অপসৃত হয়ে যাচ্ছে । 1780 সাল থেকেই এই অপসৃত শুরু হয়েছে এবং এখন আরো দ্রুততায় তা ঘটে চলেছে।
গঙ্গা দিয়ে বহমান জলের পরিমান মোটামুটি হিসেবে 525 কিলো কিউবিক মিটার। গঙ্গার উত্স্থল গঙ্গোত্রী হিমবাহ-তুষার স্রোত, যা গোমুখ (বা গরুর মুখ) নামে বিখ্যাত, 30 কিমি দীর্ঘ। গোমুখ প্রতিবছর 15 থেকে 20 মিটার অপসৃত হচ্ছে।পাঁচটি উপনদী - ভাগীরথী, মন্দাকিনী, অলকানন্দা, দোওলিঙ্গা ও পিন্দার জলস্রোতের সমন্বয়ে দেবপ্রয়োগের কাছে গঙ্গা নামে পরিচিত। গোমুখ থেকে গঙ্গোত্রী পর্যন্ত অংশটিকে বলা হয়ে থাকে তুষার স্রোতের নদী যা ভূ-উষ্ণায়ণের দরুণ অপসৃত হয়ে যাচ্ছে । 1780 সাল থেকেই এই অপসৃত শুরু হয়েছে এবং এখন আরো দ্রুততায় তা ঘটে চলেছে ( নাসার স্যাটলাইট চিত্র অনুসরণে )। তীর্থ যাত্রীরা বদ্রীনাথের পবিত্র স্থানে যাওয়ার সময় অলকানন্দার সৌন্দর্য অবলোকন করতে করতে পৌছে যায়।
জন বিস্ফোরণ ও শস্যের চাহিদার কারণে - আরো বহু অঞ্চলে চাষবাস শুরু হয়। শস্যের বৈচিত্র অনুযায়ী জলের পরিমান পরিবর্তিত হতে থাকে ( গম চাষে ৪২০ মিমি জল লাগে, আমন ধান চাষে লাগে 1050 মিমি, আঁখ চাষে 2500 মিমি জল লাগে )। ফলত পুরোনো পদ্ধতির বদলে জল সেচনে বড় বড় কংক্রীটের কাঠামো তৈরী করে জলকে আটকে বণ্টনের ব্যবস্থা শুরু করা হল, বিভিন্ন উপত্যকায় বাঁধ নির্মাণ করে জল অবরুদ্ধ করার পরিকল্পনা তৈরী হয়ে গেল। তার একটি চালচিত্র তুলে ধরলাম -
ভাগীরথী গঙ্গা উপত্যাকায় প্রস্তাবিত বাঁধ | |
প্রকল্পের নাম | প্রস্তাবিত ক্ষমতাসম্পন্ন বাঁধ (মেগাওয়াট) |
ভৈরণ- গতি- 1 | 324 |
ভৈরণ- গতি- 2 | 240 |
লোহার নাগ পালা | 660 |
পালা-মানেরি | 416 |
মানেরি ভালি | 90 |
মানেরি ভালি | 308 |
তেহরি | 2000 |
কোটেশ্বর | 400 |
কোটলি-ভেল (গঙ্গার ওপরে) | 1000 |
ঋষিকেশ-ঢিলা(গঙ্গার ওপরে) | 144 |
অলকানন্দা উপত্যকায় প্রস্তাবিত বাঁধ | |
প্রকল্পের নাম | প্রস্তাবিত ক্ষমতাসম্পন্ন বাঁধ (মেগাওয়াট) |
অলকানন্দা-বদ্রীনাথ | 140 |
ঋষিগঙ্গাঁ | 105 |
লতা-তপোবন | 108 |
তপোবন-বিষ্ণুগাদ | 520 |
বিষ্ণুপ্রয়োগ | 400 |
বিষ্ণুপ্রয়াস-পিপুকোটি | 444 |
বাওলা নন্দপ্রয়াগ | 132 |
নন্দপ্রয়াস লাংশু | 141 |
কর্ন-প্রয়াস | 252 |
দেবশ্রী(পিন্দার) | 300 |
পাদলি(পিন্দার) | 50 |
উত্যাসু | 1000 |
শ্রীনগর | 330 |
ভাগোলি | 50 |
16 জুন 2013 এ যে প্রাকৃতিক বির্পযয় তা অকল্পনীয়। মৃত্যু সংখ্যার কোন সঠিক হিসেব নেই, শোনা যাচ্ছে কয়েক হাজারের ওপর, কত গ্রাম যে নিশ্চিহ্ন হয়েছে তা বলার নয়। অনেক ধন সম্পত্তি নষ্ট হয়েছে, ভেসে গিয়েছে অনেক রাস্তাঘাট, উত্তরাঞ্চলে অনেক জলবিদ্যুত কেন্দ্র ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। নদীর ভয়ংকর স্রোতে সব ভেঙ্গে চুরে খোলামকুচির মতো ভেসে যাচ্ছে। মানুষের মৃতদেহ যত্র তত্র পড়ে আছে।
প্রকৃতি যেন প্রতিশোধ নিচ্ছে। যদিও এই বিপর্যয়ের সঠিক কারণ এখনো নির্ধারিত নয়, অনুসন্ধান চলছে, কারণ যে পরিমান বৃষ্টিপাত হয়েছিলো তাতে এই ধরণের প্লাবন হওয়ার কথা নয়। বিশেষজ্ঞদের মতে ওই অঞ্চলের ভঙ্গুর বাস্তুতন্ত্র –এই এত তীর্থযাত্রী, এত যান বাহন, শিল্পায়ণের এতটা ধকল সহ্য করতে পারে নি।
ফলতঃ এই ভয়ংকর দুর্যোগ। আর এই আমরা তো পরিবেশ নিয়ে ততটা ভাবনা করি না। আত্মকেন্দ্রিক, স্বার্থপর এক অহংকারী প্রজাতি হয়ে এক লোভী ও ভোগবাদী সমাজ রচনায় ব্যস্ত আমরা। আসুন আমরা নিজেদের পাল্টাই।
জেনে রাখুন -
18 ডিসেম্বর 2012 কেন্দ্রীয় সরকারের পরিবেশ ও বন মন্ত্রক পরিবেশ ( রক্ষা ) আইন 1986-র একটি ধারা অনুযায়ী একটি নির্দেশ জারি করে। এই নির্দেশে গোমুখ থেকে উত্তরকাশীর 100 কিলোমিটার পর্যন্ত ভাগীরথী নদীর জলবিভাজিকা অঞ্চলকে পরিবেশ সংবেদনশীল বলে চিহ্নিত করেছে। এর আয়তন 417,59 বর্গ কিলোমিটার। এই অঞ্চলে রয়েছে 88টি গ্রাম ও শহর। এই গ্রামগুলির অবস্থান 3600 ফুট থেকে 14345 ফুট পর্যন্ত। এই পরিবেশ সংবেদনশীল অঞ্চলের জন্য একটি বিশেষ সার্বিক পরিকল্পনা দুই বছরের মধ্যে রাজ্য সরকার প্রস্তুত করবে ও তা কেন্দ্রীয় সরকারের পরিবেশ ও বন মন্ত্রকের অনুমোদিত হতে হবে। এই পরিকল্পনা স্থানীয় জনসাধারণ বিশেষত নারীদের সঙ্গে ও সংশ্লিষ্ট সব সরকারি বিভাগের সঙ্গে আলোচনা করে তৈরি হবে। এই অঞ্চলে সমস্ত নির্মাণেই পরিকল্পনা অনুযায়ী হতে হবে। এখানের সব প্রাকৃতিক ও মনুষ্যসৃষ্ট ঐতিহ্যবাহী বস্তু সংরক্ষিত হবে। এখানে কোনও জলবিদ্যুত প্রকল্প, পাথর খনন বা শিল্প স্থাপন করা যাবে না। এই সমস্ত কার্যকলাপের জন্য একটি নজরদারি কমিটি তৈরি হবে।
তথ্যসূত্রঃ-
1. অরুনেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত ‘রবীন্দ্রনাথের পরিবেশ-ভাবনা,’ পরিবেশ দপ্তর, পশ্চিমবঙ্গ সরকার, 5 জুন 1999।
২. অনিল বরণ ভুঁইয়া রচিত ‘পৃথিবীর পরিবেশ কী সংকটে?’ বেস্টবুকস, জানুয়ারী 2006।
৩. দিলীপকুমার সিংহ রচিত ‘পরিবেশ ও দুর্যোগ’, শৈব্যা প্রকাশন বিভাগ, জানুয়ারী, 2009।
৪. ‘দি গঙ্গা এ্যাকশান প্ল্যান- অ্যান ওভারভিউ’ কনর্সান ফর বেটার লিভিং ও সি এম ডি এ, এপ্রিল 2010।
৫. যোজনা, আগস্ট 2013।
सम्पर्क
ড. অরুণকান্তি বিশ্বাস
প্রাক্তন পূর্বাঞ্চলীয় অধিকর্তা ও ডেপুটি ডাইরেক্টর, ন্যাশানাল এনভায়রনমেণ্টাল ইঞ্জিনীয়ারিং রির্সাচ অনস্টিটিউট (নিরী), কলকাতা
/articles/asauna-amaraa-naijaedaera-paalataai