বাতাসের প্রবাহের দিকে প্রায় 30 কিমি পর্যন্ত মৌমাছিদের কলোনি সমূহ নষ্ট হয়ে গেল l শুয়োরের ফার্মেও বর্ধিত গর্ভপাতের জন্য ফার্ম সরিয়ে নিয়ে যেতে হল l গবাদি পশুদের মধ্যেও গর্ভপাত কিছু বেড়েছিল l বিদ্যুত কেন্দ্রের কর্মীদের মধ্যেও সমীক্ষা চালিয়ে হ্রাসপ্রাপ্ত জীবনকালসহ আর্সেনিকের নানা রকম অসুখ-বিসুখ দেখা গেছে l
ইওরোপ
ইওরোপে আর্সেনিক অধ্যুষিত অঞ্চল সীমিত l যা সামান্য আছে বা ছিল তাও বহুলাংশে নিয়ন্ত্রিত l সেই সব নিয়েই বহুকাল থেকেই যথেষ্ট বৈজ্ঞানিক গবেষণা হয়েছে, যা বিশ্বের আর্সেনিক জ্ঞান ভাণ্ডারকে যথেষ্ট সমৃদ্ধ করেছে l
গ্রিস
প্রাচীনকালের লেড খনিজ উত্তোলন ও নিষ্কাশন জনিত কারণে গ্রিসের ল্যাভ্রিয়ন অঞ্চলের বাড়ির ধুলো ও মাটিতে কেজি প্রতি 3800 থেকে 14,800 মিগ্রা পর্যন্ত আর্সেনিক পাওয়া গেছে l তবে আর্সেনিক সমস্যা খুব প্রকট নয়, অনুসন্ধান এখনও অব্যাহত l
বুলগেরিয়া
আর্সেনিক সমস্যা সামান্য। একটি ধাতু নিষ্কাশন ফ্যাকটরির কাছাকাছি অঞ্চলে শিশু মৃত্যু, জাতীয় গড়ের তুলনায় কিছু বেশি l প্রসবকালে রক্তে বিষ ক্রিয়ায় ও জন্মগত বিকৃতিই এই অধিক শিশু মৃত্যুর কারণ l
হাঙ্গেরী
হাঙ্গেরিতে আর্সেনিক বিষণ ধরা পড়ল 1981 সালে l চার লক্ষাধিক মানুষ যে জল পান করছিলেন তাতে আর্সেনিকের মাত্রা 50µg /L এর বেশি পাওয়া গেছে l যে সব অঞ্চলের জলে 100µg/L এর বেশি আর্সেনিক, সে সব অঞ্চলে আর্সেনিক রোগলক্ষণ বেশি না দেখা গেলেও অধিক গর্ভপাত, মৃত সন্তান প্রসব বেড়েই চলেছিল l 14 বছরের কম বয়সি ছেলে মেয়েদের ত্বকে আর্সেনিকের বর্ধিত হাইপারপিগমেণ্টেশন, হাইপারকেরাটোসিস ইত্যাদি দেখা যাচ্ছিলই l ষাটোর্ধ্ব মানুষদের ভিতর মাথা ব্যথা, পেটের অসুখ, হাইপারপিগমেণ্টেশনের আধিক্য দেখা গেছে l 1980-87 মধ্যবর্তী সময়ে দক্ষিণ-পূর্ব হাঙ্গেরিতে, যেখানে জলে আর্সেনিকের মাত্রা 50µg/L এর বেশি ছিল, সেখানে কণ্ট্রোল গ্রুপের সাপেক্ষে স্বতঃস্ফূর্ত গর্ভপাত 1.4 গুণ বেশি এবং মৃত সন্তান প্রসব 2.8 গুণ বেশি পাওয়া গেছে l
নানা রকম রাসায়নিক পদ্ধতি ( যেমন, ফেরিক বা অ্যালুমিনিয়াম লবণের সঙ্গে চুণ মিশিয়ে জলের আর্সেনিকের অধঃক্ষেপণ, সক্রিয় কার্বন দিয়ে আর্সেনিক বিশোষণ, আয়ন বিনিময় ইত্যাদি ) ব্যবহার করে সরবরাহকৃত জলের আর্সেনিক কমিয়ে অবস্থার উন্নতি করা গেছে l কিন্তু প্রচুর পরিমাণে সৃষ্ট বিষাক্ত বর্জ্যের নিষ্পত্তি এখানো সমস্যা সঙ্কুল l
স্লোভাকিয়া
স্লোভাক রিপাবলিকের মধ্যবর্তী অঞ্চলে কয়লা জ্বালানির এক তাপবিদ্যুত কেন্দ্রের ধুলো ও ধোঁয়া বাহিত আর্সেনিক যথেষ্ট পরিমাণে ছড়াত l 1950-এর দশকের মধ্যবর্তী সময় থেকে যে কয়লা বিদ্যুত উত্পাদনে পুড়ত তাতে প্রতি 800 থেকে 1500 গ্রাম আর্সেনিক থাকত l তা থেকে কম করেও প্রতিদিন অর্ধটন আর্সেনিক ( আর্সেনিয়াস অকসাইড হিসাবে ) পরিবেশে ছড়াত l বাতাসের প্রবাহের দিকে প্রায় 30 কিমি পর্যন্ত মৌমাছিদের কলোনি সমূহ নষ্ট হয়ে গেল l শুয়োরের ফার্মেও বর্ধিত গর্ভপাতের জন্য ফার্ম সরিয়ে নিয়ে যেতে হল l গবাদি পশুদের মধ্যেও গর্ভপাত কিছু বেড়েছিল l বিদ্যুত কেন্দ্রের কর্মীদের মধ্যেও সমীক্ষা চালিয়ে হ্রাসপ্রাপ্ত জীবনকালসহ আর্সেনিকের নানা রকম অসুখ-বিসুখ দেখা গেছে l রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতি কার্যে নিযুক্ত কর্মীরাই বিদ্যুত কেন্দ্রের ধোঁয়ার আর্সেনিকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হত l তাদের রক্তে ও প্রসাবে বিধিমত আর্সেনিক পরীক্ষা ও পরিমাপ করে তার সঙ্গে কয়লা, ফ্লাইঅ্যাশ, ও ছাই- এর আর্সেনিক পরীক্ষার পর ব্যবস্থা নেওয়া হল l সেখানকার জলে গড়ে 500 µg/L আর্সেনিক উঠেছিল l অতঃপর বিদ্যুত উত্পাদন 620 থেকে 220 মেগাওয়াটে নামিয়ে আনায় 1980 সালে যেখানে বছরে 30 টন আর্সেনিক ছড়াত, 1993 সালে তা কমে 2.7 টনে নেমে এল l
চিনের গুইঝাউ প্রদেশে কয়লা পোড়ানোতে আর্সেনিক পরিবেশ বিষিত করছিল l ভারতীয় তাপবিদ্যুত কেন্দ্র সমূহও পরিবেশে সম্ভবত আর্সেনিক দূষণ ঘটাচ্ছে l
ফিনল্যাণ্ড
ফিনল্যাণ্ডের কোনও কোনও নলকূপের জলের সামান্য আর্সেনিকের উত্স আগ্নেয়গিরি উদ্ভূত আর্সেনিক ঘটিত শিলাস্তর l সেই জল থেকে ক্যানসার সহ অন্যান্য যে সব অসুখ হয়েছে, তার যথেষ্ট সমীক্ষা হয়েছে l
সুইডেন
সুইডেনের রনস্কার তাম্রধাতু নিষ্কাশন ফ্যাকটরি নির্গত আর্সেনিকে ফ্যাকটরির ভিতরের ও বাইরের মানুষদের ওপর কুপ্রভাব নিয়ে বহু চমত্কার কাজ হয়েছে l 1930 থেকে 1959 সালের মধ্যে, হাসপাতালে রক্ষিত নথিপত্র পরীক্ষা করে দেখা গেছে যেসব মহিলা গর্ভবতী অবস্থায় ফ্যাকটরিতে কাজ করতেন, তাঁদের গর্ভজাত সন্তানদের গড় ওজন ফ্যাকটরি থেকে দূরবর্তী স্থানে (কণ্ট্রোল, অর্থাত যেখানে আর্সেনিক পরিমণ্ডলীয় বা ব্যাকগ্রাউণ্ড মাত্রায় সমান) জন্মানো শিশুদের চেয়ে কম হত, 3,460 গ্রামের জায়গায় 3,394 গ্রাম l আবার ফ্যাকটরির একেবারে অন্তর্বর্তী স্থানে ( যেমন, যেখানে ধাতু নিষ্কাশন বা পরিষ্কার করার কাজ হয় ), সেখানে গর্ভস্থ সন্তান সহ কর্মরত মহিলাদের জন্মানো সন্তানদের ওজন হত সবচেয়ে কম l আবার ল্যাবরেটারি বা অফিসে যারা কাজ করত, তাঁদের বাচ্চাদের ওজন দূরত্ব অনুযায়ী বাড়ত l ফ্যাকটরির বাইরে দূরত্ব অনুযায়ী নবজাত শিশুদের ওজন আরও স্বাভাবিক হত l স্বতঃস্ফূর্ত গর্ভপাত ও ভ্রূণবিকৃতিও দূরত্ব অনুসারে কমত l
তাম্রানিষ্কাশনজাত আর্সেনিকে বর্ধিত ফুসফুসের ক্যানসারের সম্পর্ক রনস্কারে প্রতিষ্ঠিত l অনুরূপ চমত্কার পরীক্ষা হয়েছে আমেরিকা ওয়াশিংটনের ট্যাকোমা ও মণ্টানার অ্যানাকোণ্ডা তাম্র নিষ্কাশন ফ্যাকটরি নিয়েও l
ব্রিটিশ যুক্তরাজ্য
বিশেষ আর্সেনিক সমস্যা নেই l অতীত খনিজ উত্তোলন ও ধাতু নিষ্কাশনে বিমুক্ত আর্সেনিক কোনও কোনও অঞ্চলের মাটি এখনও বহন করে চলেছে l যেমন, কর্নোয়াল l
सम्पर्क
মণীন্দ্র নারায়ণ মজুমদার
প্রাক্তন অধ্যাপক, রসায়ন বিভাগ, ডীন ফ্যাকল্টি অফ সায়েন্স, কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়
Source: Extract from the book titled “Banglay Arsenic: Prokiti O Pratikar” written by Prof. Manindra Narayan Majumder
/articles/arasaenaika-ioraopae