আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র
উটা অঞ্চলের লিমার্ড কাউন্টি অঞ্চলে জলে 14 – 166 µg/L আর্সেনিক পাওয়া গেছে। অতীত আগ্নেয় গিরিজাত পদার্থ সমুহই আর্সেনিকের প্রধান উত্স। এখানকার ক্রিশ্চানদের এক বিশেষ সম্প্রদায় মর্মনদের ( mormons ) স্বস্থ্য ও জন্ম মৃত্যুর সুরক্ষিত নথিপত্র থেকে জানপদিক সমীক্ষায় মনুষ্যদেহে আর্সেনিকের প্রতিক্রিয়া ভালভাবে জানা গেছে।
বর্তমানে আমেরিকায় প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ মানুষ 50 µg/L-এর বেশি মাত্রার আর্সেনিক জলপান করে থাকে। পশ্চিমের প্রদেশগুলিতেই আর্সেনিক আধিক্য দেখা যায়। যেমন - মেইন, মিনেসোটা, মিচিগান, দক্ষিণ ডাকোটা, ওকাহোমা, উইসকনসিনে -র জলে আর্সেনিক অপেক্ষাকৃত ভাবে বেশি ( >10 µg/L ) । ইয়েলোস্টোন অঞ্চলের জলের আর্সেনিকের উত্স হল ভূতাপীয়। কোথাও কোথাও আবার আয়রন অকসাইড (Iron oxide) -এ আবদ্ধ আর্সেনিক বিজারণ প্রক্রিয়ায় বিমুক্ত হয়ে আসে। কোথাও বা আবার সালফাইড আকরিক থেকে জলের রাসায়নিক বিক্রিয়ায় আর্সেনিক জলে আসে। শুষ্ক অঞ্চলে জলের বাষ্পীভবনের ফলে গাঢ়ী ভবনের মাধ্যমে আর্সনিকের মাত্রা বেড়ে যায়। উটা অঞ্চলের লিমার্ড কাউন্টি অঞ্চলে জলে 14 – 166 µg/L আর্সেনিক পাওয়া গেছে। অতীত আগ্নেয় গিরিজাত পদার্থ সমুহ -ই আর্সেনিকের প্রধান উত্স। এখানকার ক্রিশ্চানদের এক বিশেষ সম্প্রদায় মর্মনদের ( mormons ) স্বাস্থ্য ও জন্ম মৃত্যুর সুরক্ষিত নথিপত্র থেকে জানপদিক সমীক্ষায় মনুষ্যদেহে আর্সেনিকের প্রতিক্রিয়া ভালভাবে জানা গেছে। যে অ্যানাকোন্ডায় খনিজ উত্তোলন ও তাম্রধাতু নিষ্কাশনে যথেষ্ট পরিমাণে বিমুক্ত আর্সেনিক পরিবেশ বিষিত করত, 1980 সাল থেকে তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে যে আমেরিকান আর্সেনিক হটস্পটের মধ্যে আছে ট্যাকোমা, ওয়াশিংটন স্টেট ও অ্যানাকোন্ডা, মন্টানা। এই সকল স্থানেই আর্সেনিকের কারণ হল - পূর্বেকার তাম্রধাতু নিষ্কাশন নিসৃত আর্সেনিকে বিষিত। নেভাদার আর্সেনিকের উত্স হল পাইরাইট খনিজ ও হাইড্রোথার্মাল উত্স। সল্টলেকের উটার মিলার্ড কাউন্টির পরিবেশীয় আর্সেনিকের সমীক্ষা আজ সুপ্রতিষ্ঠিত। তাছাড়া অ্যারিজোনা ও ক্যালিফোর্নিয়াতেও কিছু আর্সেনিক সমস্যা দেখা যায়। টেকসাসের একটি পেস্টিসাইড কারখানা থেকে নির্গত আর্সেনিক বিষণে নিকটবর্তী কিছু পরিবারে বর্ধিত মৃত শিশু জন্ম লক্ষ্য করা গেছে। খাদ্য থেকে আমেরিকানদের শরীরে রোজ 8 - 14 মাইক্রোগ্রাম আর্সেনিক প্রবেশ করে থাকে। উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধ থেকে বিশ শতকের প্রথমার্ধ পর্যন্ত প্রচুর পরিমাণে আর্সেনিক ঘটিত কীট নাশক ও আগাছা নাশক জমিতে ছড়ানোর ফলে আমেরিকার বহু অঞ্চলের মাটি আজো আর্সেনিক, লেড ও কপার বিষে ভারাক্রান্ত।
আসল কথা হল আমেরিকায় পানীয় জলে আর্সেনিকের আধিক্য বোশিরভাগ জায়গাতেই নেই। তবে কিছু কিছু স্থানে 50 µg/L এর কিছু বেশি আর্সেনিক থাকলেও আর্সেনিক ঘটিত অসুখ বিসুখ আমেরিকায় খুব বেশি একটা নেই। তবে আমেরিকায় পরিবেশীয় আর্সেনিক গবেষণা প্রচুর।
মেকসিকো
ক্রনিক আর্সেনিক বিষণের ফলে উত্তর মেকসিকোর মধ্য ভাগে ল্যাগুনেরা অঞ্চলে আর্সেনিকের মহামারী। আর্সেনিক ঘটিত যত রকম অসুখ হয় তার প্রায় সব রকম অসুখই এখানে দেখতো পাওয়া যায়। গবেষণা ও সমীক্ষার কাজও হয়েছে প্রচুর পরিমানে হয়েছে। মেলানোসিস, কেরাটোসিস, ক্যানসার, কালোচরণ অসুখও ( BFD ) এখানে দেখা যায়। আন্ত্রিক সমস্যাদিও ব্যাপক হারে রয়েছে। সান্টা আনার জলে 4o µg/L আর্সেনিক পাওয়া গেছে ( 1994 )। দু লক্ষাধিক মানুষ এর বেশি মাত্রার জল পান করে। আর্সেনিকের উত্স ভূতাপীয় ও ভূতত্ত্বীয়।
উন্নত ইত্তরোপ, আমেরিকা, জাপানে আর্সেনিক সমস্যা বেশ কম, যাও সামান্য ঘটেছিল, তাও আজ ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রিত। তাইওয়ান, জিনজিয়াং -এ আর্সেনিক মুক্ত পানীয় জলের ব্যবস্থা করে অবস্থা অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে। তবে ঐ সব বা ঐ ধরণের ব্যবস্থা পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের সর্বত্র প্রযোজ্য নাও হতে পারে। এখানকার সমস্যার প্রকৃতি ও ব্যাপকতা একেবারেই ভিন্ন ধরণের। তার ওপর রয়েছে প্রশাসনিক তত্পরতা ও দক্ষতা, প্রযুক্তি পরিকাঠামো ও আর্থিক শক্তি অপ্রতুল। আশা করা যায় এই রকম ভয়ঙ্কর ভয়াবহ নতুন আর্সেনিক সমস্যা বিশ্বে আর কোথাও হবে না, কারণ পূর্বেকার অন্য জায়গার দৃষ্টান্ত থেকে মানুষ শিক্ষা নেবেই।
চিলি
আন্দিজ পর্বতমালার প্রস্রবনসমূহ থেকে উত্পন্ন হয়েছে যে সমস্ত নদীগুলি, সেগুলি আগ্নেয়গিরিজাত শিলাস্তরের ওপর দিয়ে আসার ফলে সেগুলির জলে আর্সেনিক আধিক্য দেখা যায়। আগ্নেয়গিরির অবক্ষেপ (সেডিমেন্ট), কিছু আকরিক ও মৃত্তিকা ক্ষয়ীভূত হয়েই জলে আর্সেনিক আসে। উত্তর চিলির বেশ কিছু নদী ও খাঁড়ির জল আর্সেনিক দূষণে দূষিত। সেই জল অবশ্য পানীয় ও সেচে বরাবরই ব্যবহার হত। বিষিত মাটিতে আর্সেনিকের মাত্রা 40 থেকে 448 মিগ্রা কেজি প্রতি। এখানকার বাঁধাকপি, মূলো, বিট, সিম, আলু, পেঁয়াজে আর্সেনিকের পরিমাণ বেশি।
অ্যান্টোফ্যাগাস্টা ও ক্যালামা শহরের চার লক্ষ অধিবাসীকে আর্সেনিকমুক্ত শোধিত জলসরবরাহ করা হচ্ছে রাসায়নিক পদ্ধতি ব্যবহার করে আর্সেনিক নিরাকরণ করে। ফেরিক বা অ্যালুমিনিয়াম হাইড্রকসাইডের সঙ্গে আবিষ্ট, তঞ্চিত আর্সেনিক ফিল্টার করে জল আর্সেনিক মুক্ত করা অ্যান্টোফ্যাগাস্টার এক সাফল্যের ইতিহাস। অ্যান্টোফ্যাগাস্টাত জলে আর্সেনিক থাকত 0.40 - 0.45 মিগ্রা লিটার প্রতি, পরে যা নেমে আসে 40 µg/L এর নীচে। আর্সেনিক দূরীকরণ কারখানায় আর্সেনিকযুক্ত ফেরিক হাইড্রকসাইড বর্জ্য মরুভূমিতে পুকুর তৈরি করে সংরক্ষিত হচ্ছে।
এখানকার জলীয় আর্সেনিকের বৃহত অংশই হল As (V)। মানুষজনের, বিশেষ করে শিশুদের দেহে, আর্সেনিক ঘটিত রোগলক্ষণ প্রকট। গর্ভপাত, শিশু মৃত্যুর হারও ছিল যথেষ্ট বেশি। 1958 সাল থেকে নদীর জল শোধন করে সরবরাহ করা হয়, আর তার পর থেকেই আর্সেনিকের সংক্রমণ শুরু। ঐ নদীর জলে আর্সেনিকের মাত্রা ছিল 800 µg/L. 1970-এর পর থেকে আর্সেনিক দূরীকরণ করে জল সরবরাহের ব্যবস্থা চালু করা হয়। এর পর থেকে অবস্থার উন্নতি হতে থাকে। প্রথম ধাপে জলে আর্সেনিকের মাত্রা কমে, 800 থেকে 100 হয়, তার পর তা নেমে আসে 40 µg/L এ। তখন অনুরূপ ভৌগোলিক ও জনবৈশিষ্ট্যর সান্টিয়াগো (রাজধানী) ও ভ্যালাপারাইসো শহরের মতই অ্যান্টোফ্যাগাস্টাতেও শিশু মৃ্ত্যুর হার একই রকম ভাবে কমে এলো।অ্যান্টোফ্যাগাস্টা ও ক্যালামা শহরের চার লক্ষ অধিবাসীকে আর্সেনিকমুক্ত শোধিত জলসরবরাহ করা হচ্ছে রাসায়নিক পদ্ধতি ব্যবহার করে আর্সেনিক নিরাকরণ করে। ফেরিক বা অ্যালুমিনিয়াম হাইড্রকসাইডের সঙ্গে আবিষ্ট, তঞ্চিত আর্সেনিক ফিল্টার করে জল আর্সেনিক মুক্ত করা অ্যান্টোফ্যাগাস্টার এক সাফল্যের ইতিহাস। অ্যান্টোফ্যাগাস্টাত জলে আর্সেনিক থাকত 0.40 - 0.45 মিগ্রা লিটার প্রতি, পরে যা নেমে আসে 40 µg/L এর নীচে। আর্সেনিক দূরীকরণ কারখানায় আর্সেনিকযুক্ত ফেরিক হাইড্রকসাইড বর্জ্য মরুভূমিতে পুকুর তৈরি করে সংরক্ষিত হচ্ছে।
আর্জেন্টিনা
দক্ষিণ-পূর্ব আর্জেন্টিনার পম্পা প্রদেশের করডোবা অঞ্চলের জল শত সহস্র বত্সরই যে আর্সেনিক যুক্ত তা আধুনিক বিজ্ঞান উদঘাটিত করেছে। তাতে আর্সেনিক ঘটিত অসুক বিসুখ হতই। তখন জনসংখ্যা কম ছিল, রোগ নির্ণয়ও সম্ভব ছিল না। এখানকার জলের আর্সেনিক মাত্রা 100 থেকে 316 µg/L, সর্বোচ্চ 3810 µg/L (1989)। জলে আর্সেনিকের সঙ্গে সেলেনিয়ামের আধিক্য। এখানকার আর্সেনিকের উত্স লোয়েস মৃত্তিকা, অপচূর্ণ ভূতত্ত্বীয় পদার্থ সমৃদ্ধ ( পাইরোক্লাসটিক )। লোয়েস মৃত্তিকায় আর্সেনিকের বর্ধিত মাত্রা 5.5 - 73 মিগ্রা কেজি প্রতি। যে সব জায়গায় জলে আর্সেনিক বেশি, সে সব স্থানে নানা রকম ক্যানসার, স্ফতঃস্ফুর্ত গর্ভপাত, জন্মপরে শিশু মৃত্যু ইত্যাদির আধিক্য। বৈজ্ঞানিকভাবে এটা প্রতিষ্ঠিত যে এতকাল আর্সেনিকে উন্মুক্ত থেকেও এই অঞ্চলের মানুষ জনের ভিতর আর্সেনিকে অনাক্রম্যতা জন্মায়নি। উত্তর পশ্চিম আর্জেন্টিনার সল্টা ও ভুজ প্রদেশের উপরিতলের জল, অগভীর নলকূপ ও উষ্ণ প্রস্রবন আর্সেনিকের উত্স। উষ্ণ প্রস্রবনগুলির জলের আর্সেনিক মাত্রা 50 থেকে 9900 µg/L পানীয় জলে 470 থেকে 770 µg/L টার্সিয়ারি - কোয়াটার্নারি যুগের আগ্নেয়গিরি অবক্ষেপে যুক্ত হয় আগ্নেয়গিরি উত্তর গেজার ও উষ্ণ প্রস্রবনের আর্সেনিক।
আফ্রিকা
ঘানার ও বুয়াসি অঞ্চলের পর্তুগিজ আমলের স্বর্ণ খনিজাত আর্সেনিক পানীয় জলে আসে, যার মাত্রা 2 – 175 µg/L আর্সেনোপাইরাইট জারণেও জলে কিছু আর্সেনিক আসে।
অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড
খনিজ উত্তোলনে ( স্বর্ণখনি অঞ্চলে বিশেষ করে ) আর্সেনিক ঘটিত কিছু আকরিক জল ও বায়ুতে উন্মুক্ত হয়। অক্সিজেন ও জীবাণু ক্রিয়ায় কিছু জলাশয়ে আর্সেনিকের মাত্রাধিক্য দেখা যায়।
অস্ট্রেলিয়ার ভিকটোরিয়ায় পুরাতন খনির ভূগর্ভ জলে 12, 000 µg/L আর্সেনিক পাওয়া গেছে। এইসব জলে আর্সেনিক কমানোর চেষ্টা চলছে।
আর্সেনিক সনাক্তকরণ ও পরিমাপের পদ্ধতি যখন অনুদঘাটিত ছিল, তখন অজ্ঞাতসারেই মানুষ সহ অন্যান্য জীবসমূহ কম বেশি আর্সেনিক আক্রান্ত হয়েছে। যেমন আর্জেণ্টিনা বা চিলিতে। 1960-এর দশক থেকে খুব কম মাত্রায় আর্সেনিককেও অল্প খরচে অল্প সময়ে পরিমাপ যখন সম্ভব হল, তখন দেখা গেল পৃথিবীতে আর্সেনিকের কতকগুলি হটস্পট বা তপ্তাঞ্চল আছে। অনুসন্ধান পদ্ধতি যত সহজ ও সুলভ হয়েছে, অনুসন্ধান ক্ষেত্রও তত বেড়েছে। পৃথিবীর আর্সেনিক মানচিত্রে যেসব দেশ এখনো আসে নি (যেমন রাশিয়া ), হয় সেখানে অনুসন্ধান হয় নি, অথবা পরীক্ষা, সমীক্ষার ফলাফল অপ্রকাশিত থেকেছে।
আর্সেনিকের অ্যাকিউট বা তীব্র বিষক্রিয়া
আন্ত্রিক গোলযোগ ধীরে প্রকাশ পায়। আর্সেনিক সংক্রমণের একটা আশ্চর্য বিশেষত্ব যে মুখাবয়বে রোগলক্ষণ পরিস্ফুট হয় না, এর কারণ এখনও অজ্ঞাত। তবে অ্যাকিউট বিষণে পরিশোষিত আর্সেনিক পাকস্থলি ও অন্ত্রের কৈশিক শিরা ধমনী ক্ষতিগ্রস্ত করায় প্রদাহ সৃষ্টি হয়। গা-গোলানো ভাব ও বমি বেশি হতে পারে। স্বল্প বিষণে গলা ও মুখ শুকনো মনে হতে পারে, বুকে ব্যথা, পেটে ব্যথা, বমিভাব, অল্প-স্বল্প দাস্ত।
দেহ ওজনের প্রতি কেজিতে ১ থেকে ৩ মিগ্রা আর্সেনিকের উপস্থিতি মারাত্মক। খালিপেটে একবারে বেশি আর্সেনিক খেলে ৩০ মিনিটের মধ্যে তীব্র বিষক্রিয়া প্রবেশ পায়। জিভ শুকিয়ে যায়, ঠোঁ জ্বালা করে, খেতে কষ্ট হয়। গা গুলোনো, বমি, পেটে ব্যথা, দাস্ত, হাত-পা খিঁচুনি হয় এবং ভীষণ তেষ্টা পায়। কিডনি আক্রান্ত হয়, প্রস্রাব কমে যায়। মানসিক বিকার, ভুল বকা, তন্দ্রা, কোমা, আচ্ছন্নতা, অবশেষে মৃত্যু, চব্বিশ ঘণ্টা বা তার আগেই মৃত্যু হয়। তাত্ক্ষণিক সুচিকিত্সা হলে মৃত্যু হয়তো আটকানো যায় কিন্তু নানাবিধ শারীরিক অসুস্থতা, বিশেষ করে স্নায়ুতন্ত্রের ও হৃত্পিন্ডের গোলযোগ স্থায়ী হয়।ক্রনিক বিষণ
ক্রনিক বিষণ দীর্ঘদিন ধরে ধীরে চুপিসাড়ে হয়ে চলে। দুর্বলতা, অবসাদ, ক্ষুধামান্দ্য, পেশীর দুর্বলতা, গা-বমিভাব, ওজন হ্রাস, ডায়ারিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্য প্রাথমিক লক্ষণাবলীর অন্তর্ভুক্ত। আর্সেনিক সংক্রমণ তো অনেক দিন বোঝাই যায় না। ফলে রোগীর লাগাতার কষ্ট, ও লক্ষণাবলীর জন্য নানারকম ভুল চিকিত্সা হয়। ত্বক, রক্ত ও স্নায়ুতান্ত্রিক লক্ষণাবলীতেই ক্রনিক বিষণ সুস্পষ্টভাবে প্রকটিত হয়।
ত্বকে ছোপ পড়া ( পিগমেনেটেশন ) ক্রনিক বিষণের একিট পরিচিত লক্ষণ। দেহত্বকে নানারকম সুস্পষ্ট ছোপ ( স্পট ) ও গুটির নানারকম নাম –
ডিফিউস মোলানোসিস, লিউকোমেলানোসিস, ব্রেইন ড্রপ পিগমেনটেশন, কেরাটোসিস। ছোপ, রং অন্য কারণেও হতে পারে, কিন্তু কেরাটোসিস থাকলে তা অবশ্যই আর্সেনিকের কারণে। আর্সেনিক-পীড়িত বহু মানুষের ত্বকে মেলানোসিস, কেরাটোসিস দেখা না গেলেও এদের নখে ও চুলে, বিশেষ করে নখে, যথেষ্ট আর্সেনিকভাবে পাওয়া যায়। আর্সেনিক বিষণের এই স্তরকে ডাঃ কে. সি. সাহা প্রাকনিদানিক ( প্রি ক্লিনিক্যাল সাব ক্লিনিক্যাল ) ধাপ বলেন।
আন্ত্রিক গোলযোগ ধীরে প্রকাশ পায়। আর্সেনিক সংক্রমণের একটা আশ্চর্য বিশেষত্ব যে মুখাবয়বে রোগলক্ষণ পরিস্ফুট হয় না, এর কারণ এখনও অজ্ঞাত।
বিপাক, রেচন ও দেহাঙ্গে সঞ্চয়
জল, বাতাস ও খাদ্যদি থেকে জৈব অজৈব নানান প্রজাতির আর্সেনিক মানুষ ও জন্তু, জানোয়ারদের দেহে প্রবেশ করে। স্থান থেকে স্থানান্তরে দেহ মধ্যে এরা বিচরণ করে এবং তাদের নানা রাসায়নিক রূপান্তর ঘটে, শরীরের নানা অঙ্গে কম বেশি এরা সঞ্চিত হয়। দীর্ঘ অনুপ্রবেশে ক্রমসঞ্চয়ণও ঘটে, এবং রক্তেও বাহিত হতে থাকে আর বাকিটা দ্রুত, প্রধানত মূত্রের মাধ্যমে দেহ থেকে নিষ্ক্রান্ত হয়। মল ও ঘামেও সামান্য বেরিয়ে যায়। মল মূত্রের মাধ্যমে দুই এক দিনেই 45 থেকে 75 শতাংশ প্রবিষ্ট আর্সেনিক দেহ থেকে বেরিয়ে যায় বলেই রোগ লক্ষণ ফুটে বেরোতে সময় লাগে।
মানবদেহে আর্সেনিকের পদচিহ্ন (বায়োমার্কার)
প্রসাবে বিপাকিত আর্সেনিকের প্রজাতিসমূহের ( মেটাবোলিট সমূহ ) সমগ্র পরিমিতি, রক্তের আর্সেনিক ভার, আর চুল ও নখে সঞ্চিত আর্সেনিক দেহে আর্সেনিকের উপস্থিতি বা নিষ্ক্রমণের পদচিহ্নের স্বাক্ষর হিসাবে ধরা হয়। প্রস্রাবের আর্সেনিকই [As(V), As(III), MMA, DMA] আর্সেনিক বিষণের শ্রেষ্ঠ নির্দেশক।
চুল ও নখের কেরাটিন সিস্টেইনের সালফ হাইড্রিল (-SH) গ্রুফ থাকায় তাতে আর্সেনিক শক্ত রাসায়নিক বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে জমতে থাকে। চুল মাসে প্রায় 1 সেমি করে বাড়ে। চুলের বিভিন্ন অঞ্চলে আর্সেনিকের পরিমাপ আর্সেনিক সংক্রমণের কাল সম্পর্কে কিছু ধারণা দিতে পারে। চুল ও নখে আর্সেনিকের মাত্রা থাকে যথাক্রমে সাধারণত 0.02 - 02µg /g ও 0.02 – 05µg/g পশ্চিমবঙ্গে কিছু বেশি পাওয়া যায়, 3-10µg/g সব অঞ্চলেই যদিও আর্সেনিক জমে, তবু নানা রকম বিবেচনায় পায়ের আঙুলে আর্সেনিক পরিমাপই শ্রেয় বলে বিবেচিত। রক্তের আর্সেনিক সাম্প্রতিক উচ্চমাত্রার আর্সেনিক বিষণ নির্দেশ করে।
মানবদেহে আর্সেনিক দেহাভ্যন্তবীণ নানান যন্ত্র বা যন্ত্রাংশকে বা ব্যাহত করে তাদের কার্যকারিতা ক্ষতিগ্রস্ত করে।
অন্ত্র ও পাকস্থলিতে প্রতিক্রিয়া
ক্রনিক বিষণে লক্ষণ সুস্পষ্ট নয়। তবে অ্যাকিউট বিষণে পরিশোষিত আর্সেনিক পাকস্থলি ও অন্ত্রের কৈশিক শিরা ধমনী ক্ষতিগ্রস্ত করায় প্রদাহ সৃষ্টি হয়। গা-গোলানো ভাব ও বমি বেশি হতে পারে। স্বল্প বিষণে গলা ও মুখ শুকনো মনে হতে পারে, বুকে ব্যথা, পেটে ব্যথা, বমিভাব, অল্প-স্বল্প দাস্ত। অল্প ডোজের ক্রনিক বিষণে গ্যাসস্ট্রো-ইনটেস্টাইন লক্ষণাবলী সুস্পষ্ট নয়, স্বল্প হজমের গোলমাল, ক্ষুধামান্দ্য, ওজন হ্রাস ইত্যাদি হতে পারে।
सम्पर्क
মণীন্দ্র নারায়ণ মজুমদার
প্রাক্তন অধ্যাপক, রসায়ন বিভাগ, ডীন ফ্যাকল্টি অফ সায়েন্স, কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়
/articles/amaeraikaaya-arasaenaika